Skip to main content

Posts

Showing posts with the label

প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস

প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস– তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।। এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায় বাটে ঘাটে হাজার লোকের হাস্য-পরিহাস– মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।। আমের বনে দোলা লাগে, মুকুল প’ড়ে ঝ’রে– চিরকালের চেনা গন্ধ হাওয়ায় ওঠে ভ’রে । মঞ্জরিত শাখায় শাখায়, মউমাছিদের পাখায় পাখায়, ক্ষণে ক্ষণে বসন্তদিন ফেলেছে নিশ্বাস– মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।

পল্লী-বর্ষা

আজিকের রোদ ঘুমায়ে পড়িয়া ঘোলাট-মেঘের আড়ে, কেয়া-বন পথে স্বপন বুনিছে ছল ছল জল-ধারে। কাহার ঝিয়ারী কদম্ব-শাখে নিঝ্ঝুম নিরালায়, ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে অস্ফুট কলিকায়! বাদলের জলে নাহিয়া সে মেয়ে হেসে কুটি কুটি হয়, সে হাসি তাহার অধর নিঙাড়ি লুটাইছে বনময়। কাননের পথে লহর খেলিছে অবিরাম জল-ধারা তারি স্রোতে আজি শুকনো পাতারা ছুটিয়াছে ঘরছাড়া! হিজলের বন ফুলের আখরে লিখিয়া রঙিন চিঠি, নিরালা বাদলে ভাসায়ে দিয়েছে না জানি সে কোন দিঠি! চিঠির উপরে চিঠি ভেসে যায় জনহীন বন বাটে, না জানি তাহারা ভিড়িবে যাইয়া কার কেয়া-বন ঘাটে! কোন্ সে বিরল বুনো ঝাউ শাখে বুনিয়া গোলাপী শাড়ী, - হয়ত আজিও চেয়ে আছে পথে কানন-কুমার তারি! দিকে দিগেনে- যতদূর চাহি, পাংশু মেঘের জাল পায়ে জড়াইয়া পথে দাঁড়ায়েছে আজিকার মহাকাল। গাঁয়ের চাষীরা মিলিয়াছে আসি মোড়লের দলিজায়, - গল্পের গানে কি জাগাইতে চাহে আজিকার দিনটায়! কেউ বসে বসে বাখারী চাঁচিছে, কেউ পাকাইছে রসি, কেউবা নতুন দোয়াড়ীর গায়ে চাঁকা বাঁধে কসি কসি। কেউ তুলিতেছে বাঁশের লাঠিতে সুন্দর করে ফুল কেউবা গড়িছে সারিন্দা এক কাঠ কেটে নির্ভুল। মাঝখানে বসে গাঁয়ের বৃদ্ধ, করুণ ভাটীর সুরে, আমীর সাধুর কাহিনী কহি...

পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে

পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে, পাগল আমার মন জেগে ওঠে॥ চেনাশোনার কোন্‌ বাইরে, যেখানে পথ নাই নাই রে, সেখানে অকারণে যায় ছুটে॥ ঘরের মুখে আর কি রে, কোনো দিন সে যাবে ফিরে। যাবে না, যাবে না, দেয়াল যত সব গেল টুটে॥ বৃষ্টি-নেশা-ভরা সন্ধ্যাবেলা, কোন্‌ বলরামের আমি চেলা, আমার স্বপ্ন ঘিরে নাচে মাতাল জুটে, যত মাতাল জুটে। যা না চাইবার তাই আজি চাই গো, যা না পাইবার তাই কোথা পাই গো। পাব না, পাব না, মরি অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে॥

প্রথম মা

একই জল একই পানি সাগরে সাগরে নাচে প্রথম মায়ের প্রসব বেদনা পৃথিবীর মনে আছে, কেউ সাদা কেউ কালো রঙ্গিন বলেই ভাল, রঙ মশালটা একলা জ্বেলো না আমার বুকেও জ্বালো। একই আকাশের নিচে একই পৃথিবীর বুকে প্রথম মায়ের দুধের গন্ধ সব মানুষের মুখে… কেউ সাদা কেউ কালো রঙ্গিন বলেই ভাল, রঙ মশালটা একলা জ্বেলো না আমার বুকেও জ্বালো। একই দিন একই রাত সব দেশে আসে যায় প্রথম মায়ের চুম্বন ঐ পৃথিবী বাঁচতে চায়, কেউ সাদা কেউ কালো রঙ্গিন বলেই ভাল, রঙ মশালটা একলা জ্বেলো না আমার বুকেও জ্বালো।। একই জন্ম-মৃত্যু জীবনের আনাগোনা প্রথম মায়ের শরীরের মত পৃথিবীর গান শুনা। শুনতে শুনতে বলি আমায় সঙ্গে নাও, প্রথম মায়ের গর্ভে আমায় আবার জন্ম দাও।

প্রস্তুতি

কার জঙ্গল কাদের দখলে? অরণ্য চায় ভাবুক সকলে কারা জন্মায় বাঁচে আর মরে? আদিবাসীদের প্রতি ঘরে ঘরে? কাদের ভাষায় জঙ্গল পায় সবুজের সম্মান? আমি রেখে যাই প্রশ্নের মত এই নাগরিক গান।। কারা চিরকাল জঙ্গলে ছিল? গাছের ঠিকানা কারা বলে দিল? শদর, সেগুন, পলাশে ফাগুন কাদের বুকের জান? আমি রেখে যাই প্রশ্নের মত এই নাগরিক গান।। আদিম পৃথিবী কাদের জন্য গড়ে তুলেছিল এত অরণ্য? বুনো শূয়রের দাঁতের আঘাতে কারা দিয়ে গেছে প্রান? আমি রেখে যাই প্রশ্নের মত এই নাগরিক গান।। কাদের স্বদেশ এই বনভূমি? দখল করলে সরকার তুমি, কাদের বন্য গ্রামে সরকারি ঠিকেদার হেঁটে যান? আমি রেখে যাই প্রশ্নের মত এই নাগরিক গান।। গাছের শরীরে কুঠার চালাও আদিবাসীদের কতটা কাঁদাও? ভেবেও দেখনা দিনভর তাঁরা কতটুকু খেতে পান? আমি বেঁচে খাই প্রশ্নের মত এই নাগরিক গান।। কাটা গাছগুলো নিলামে উঠে গাছ সদাগর কিনতে ছোটে কত দর হাঁক, কত টাকা লেখ, কার টাকা কারা খান? আমি খেতে পাবো কেউ যদি কেনে এই নাগরিক গান।। যাদের হাসিতে চোখের জলে অরণ্য তার গল্প বলে, তারাই নিচ্ছে প্রস্তুতি দেখ বিদ্রোহে টান টান… ...

পাগলা সানাই

হাত পেতে নিয়ে চেটে পুটে খাই বিসমিল্লার পাগলা সানাই, হাত পেতে নিয়ে চেটে পুটে খাই স্মৃতি বিজরিত পাগলা সানাই। ছোট্ট বেলায় শুনেছি প্রথম কেউটে সানাই সুর পঞ্চম, খেয়েছে লোকটা এই মাথাটাই ধরেছে নেশায় খ্যাপাটে সানাই। কৈশোরে দেখা আকাশ কুসুম জানিনা কেন যে আসতো না ঘুম, অচেনা কষ্ট কি যাচ্ছে তাই রাতেরে নিয়েই শুনলে সানাই। যৌবনে প্রেম যেই না এলো জানিনা কেন যে কান্না পেলো, সেই প্রেম আজ তোমায় জানাই নাছোর বান্দা প্রেমিক সানাই। গেল যৌবন মাঝ বয়সে কান্না ঢাকতে শিখেছি হেসে, হাসি কান্নার এই দু’টানায় শেখালো্ আমাকে রসিক সানাই। বিস্ময় আজও গেলোনা আমার স্বপ্নে এখনও যৌথ খামার, তোমার জন্য গানই বানাই তোমার জন্য রইল সানাই।

পেটকাটি চাঁদিয়াল

পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগ্গা আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক, মাটিতে অবজ্ঞা। বয়স বারো কি তেরো, রিকশা চালাচ্ছে, আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক ছেলেটাকে ডাকছে। বয়স বারো কি তেরো, বড়জোর চোদ্দ, রিকশা চালাতে শিখে নিয়েছে সে সদ্য। ছেলেটার মন নেই প্যাডেলে বা চাক্কায়, ঐ তো লেগেছে প্যাঁচ চাঁদিয়াল বগ্গায়। শান্ দেওয়া মানজায়, বগ্গা ভো কাট্টা। ছেলেটা চেঁচিয়ে ওঠে “এই নিয়ে আটটা”। সওয়ার বাবুটি ভাবে, দেরি হয়ে যাচ্ছে। বিচ্ছু ছোঁড়াটা বড় আস্তে চালাচ্ছে। “ওই ছোঁড়া, আরে ওই ছোঁড়া ম’ল যা আট্টা তো তোর কি ?” সওয়ার বাবুটি দেন রেগে মেগে হুমকি। বাবুর খ্যাঁকানি শুনে সম্বিত্ ফিরে পায় ছেলেটা যে করে হোক রিক্শা চালিয়ে যায়। এ কিশোর পারবে কি এই বোঝা টানতে ? এই বাবু কোনো দিন পারবে কি জানতে ? যে ছেলেটা প্রাণপণে রিক্শা চালাচ্ছে, মুক্তির ঘুড়ি তাকে খবর পাঠাচ্ছে।

প্রথম সবকিছু

প্রথম স্কুলে যাবার দিন, প্রথমবার ফেল, প্রথম ছুটি হাওড়া থেকে ছেলেবেলার রেল, প্রথম খেলা লেকের মাঠে প্রথম ফুটবল, মান্না, পিকে, চুনির ছবি- বিরাট সম্বল। প্রথম শেখা ইমন রাগ প্রথম ঝাপ তাল, প্রথম দেখা শহরজোড়া বিরাট হরতাল, প্রথমবার লুকিয়ে টানা প্রথম সিগারেট, প্রথমবার নিজামে গিয়ে কাবাব ভরপেট। এই শহর জানে আমার প্রথম সবকিছু, পালাতে চাই যতো সে আসে আমার পিছু পিছু। প্রথম প্রেমে পরার পর সবাই পস্তায়, হন্যে হয়ে ক্লাশ পালিয়ে ঘুরেছি রাস্তায়, প্রথম প্রেম ঘুচে যাওয়ার যন্ত্রণাকে নিয়ে, কান্না চেপে ঘুরেছিলাম তোমারই পথ দিয়ে। এই শহর জানে আমার প্রথম সবকিছু, পালাতে চাই যতো সে আসে আমার পিছু পিছু। প্রথম দেখা লাল নিশান মিছিল কলতান, প্রথম শোনা জনসভায় হেই ছামালো ধান, প্রথম দেখা তরুণ লাশ চলছে ভেসে ভেসে, দিনবদল করতে গিয়ে শহীদ হল শেষে। প্রথম দেখা ভিখারিনীর কোলে শহীদ শিশু, প্রথম দেখা আস্তাকুঁড়ে কলকাতার যীশু, প্রথম দেখা দিন-দুপুরে পুলিশ ঘুস খায়, প্রথম জানা পয়সা দিয়ে সবই কেনা যায়। এই শহর জানে আমার প্রথম সবকিছু, পালাতে চাই যতো সে আসে আমার পিছু পিছু। প্রথম যৌবনের শেষে মাঝবয়েসে...

প্রতিদান

আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাধি তার ঘর, আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর। যে মোরে করিল পথের বিবাগী; পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি; দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হয়েছে মোর; আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাধি তার ঘর । আমার একুল ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি তার কুল বাধি, যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি; যে মোরে দিয়েছে বিষ ভরা বান, আমি দেই তারে বুক ভরা গান; কাটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর, আপন করিতে কাদিঁয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর । মোর বুকে যেবা কবর বেধেছে আমি তার বুক ভরি, রঙ্গীন ফুলের সোহাগ জড়ান ফুল মালঞ্চ ধরি। যে মুখে সে নিঠুরিয়া বাণী, আমি লয়ে সখী, তারি মুখ খানি, কত ঠাই হতে কত কি যে আনি, সাজাই নিরন্তর, আপন করিতে কাদিয়া বেড়াই যে মোরে করিয়াছে পর ।

পুরাতন ভৃত্য

ভূতের মতন চেহারা যেমন , নির্বোধ অতি ঘোর । যা - কিছু হারায় , গিন্নি বলেন , ‘ কেষ্টা বেটাই চোর । ' উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত , শুনেও শোনে না কানে । যত পায় বেত না পায় বেতন , তবু না চেতন মানে । বড়ো প্রয়োজন , ডাকি প্রাণপণ , চীৎকার করি ‘ কেষ্টা ' — যত করি তাড়া , নাহি পাই সাড়া , খুঁজে ফিরি সারা দেশটা তিনখানা দিলে একখানা রাখে , বাকি কোথা নাহি জানে — একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে তিনখানা ক ' রে আনে । যেখানে সেখানে দিবসে দুপুরে নিদ্রাটি আছে সাধা — মহাকলরবে গালি দেই যবে ‘ পাজি হতভাগা গাধা ' — দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে হাসে , দেখে জ্বলে যায় পিত্ত ! তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার — বড়ো পুরাতন ভৃত্য । ঘরের কর্ত্রী রুক্ষমূর্তি বলে , ‘ আর পারি নাকো ! রহিল তোমার এ ঘর দুয়ার , কেষ্টারে লয়ে থাকো । না মানে শাসন ; বসন বাসন অশন আসন যত কোথায় কী গেল ! শুধু টাকাগুলো যেতেছে জলের মতো । গেলে সে বাজার সারা দিনে আর দেখা পাওয়া তার ভার — করিলে চেষ্টা কেষ্টা ছাড়া কি ভৃত্য মেলে না আর ! শুনে মহা রেগে ছুটে যাই বেগে , আনি তার টিকি ধরে ; বলি তারে , ‘ পাজি , বেরো তুই আজই , দূর করে দিনু ...