Thursday, August 22, 2013

বয়স আমার

বয়স আমার মুখের রেখায় শেখায় আজব ত্রিকোণমিতি,
কমতে থাকা চুলের ফাকে মাঝবয়সের সংস্কৃতি,
হাটুতে আজ টান লেগেছে, টান লেগেছে গাঁটে গাঁটে
মধ্যবিত্ত শরীরে আজ সময় শুধু ফন্দি আটে,
খালি চোখে পড়তে গিয়ে হোচট খেয়ে চশমা নেয়া
বয়স হওয়া মানেই বোধহয় স্বচ্ছতাকে বিদায় দেওয়া।

বিদায় নিল অনেক কিছু, কোনটা আগে কোনটা পরে
বয়স হচ্ছে বলেই বোধহয় মাঝে মাঝে একলা লাগে,
একলা লাগার সময় মানে নিজের সঙ্গে কথা বলা
তারই ফাকে কোথায় যেন অখিল বন্ধু ঘোষ-এর গলা,
গলার কাছে পাল তুলেছে আজগুবি এক স্মৃতির খেয়া
বয়স হওয়া মানেই বোধহয় স্মৃতির সঙ্গে আড্ডা দেওয়া।

কে বলে হে আড্ডা নাকি কম বয়সের কথকথা
বয়স হলেই বরং জমে আড্ডা এবং নিরবতা!
নিরবতার অপর পারে সন্ধ্যে নামার একটু আগে
বয়স হচ্ছে বলেই বোধহয় হাঁটতে হাঁটতে একলা লাগে;
সন্ধ্যে নামার সময় হলে পশ্চিমে নয়, পূবের দিকে,
মুখ ফিরিয়ে ভাববো আমি কোন দেশে রাত হচ্ছে ফিকে।

ইচ্ছে হল

ইচ্ছে হল এক ধরনের গঙ্গাফড়িং
অনিচ্ছেতেও লাফায় খালি তিরিং বিড়িং।

ইচ্ছে হল এক ধরনের বেড়াল ছানা
মিহি গলার আব্দারে সে খুব সেয়ানা।

ইচ্ছে হল এক ধরনের মগের মুলুক,
ইচ্ছে হাওয়ায় অনিচ্ছেটাও দুলছে দুলুক।

ইচ্ছে হল এক ধরনের আতশবাজি
রাতটাকে সে দিন করে দেয় এমন পাজী।

ইচ্ছে হল এক ধরনের দস্যি মেয়ে
দুপুর বেলা দাদুর আচার ফেলল খেয়ে।

ইচ্ছে হল এক ধরনের পদ্য লেখা
শব্দে সুরে ইচ্ছে করে বাঁচতে শেখা।

ইচ্ছে হল এক ধরনের পাগলা জগাই
হঠাৎ করে ফেলতে পারে যা খুশী তাই।

ইচ্ছে হল এক ধরনের স্বপ্ন আমার
মরবো দেখে বিশ্ব জুড়ে যৌথ খামার।

Wednesday, August 21, 2013

তোমাকে দেখছি

তোমাকে দেখছি ল্যাম্প পোস্ট এর নীচে
তোমাকে দেখছি কালীঘাট ব্রিজ এ একা
ভবানী ভবন যাবার বাঁকের মুখে
আসলে কিন্তু সেই তোমাকেই দেখা

তোমাকে দেখছি ব্রেবর্ন রোড এর ভীড়ে
তোমাকে দেখছি চীনে পট্টির জুতো
এসপ্লানাডের পাতাল স্টেশন এ নেমে
আসলে কিন্তু তোমাকে দেখার ছুতো

তোমাকে দেখছি শ্যাম বাজারের মোড়ে
তোমাকে দেখছি পাঁচ মাথা একাকার
মানুষের ভীড়ে রাস্তা গুলিয়ে গিয়ে
আসলে কিন্তু তোমাকেই দরকার

তোমাকে দেখছি কফি হাউসের কাছে
তোমাকে দেখছি খুঁজছ পুরনো বই
পুরনো কিম্বা নতুন মলাটে আমি
আসলে কিন্তু তোমাকে খুঁজবই

তোমাকে দেখছি বই মেলা চত্বরে
তোমাকে দেখছি স্বতন্ত্রর স্টল
অনুষ্টুপের ঠেলাঠেলি ভেদ করে
আসলে কিন্তু তোমাকে দেখার ছল

তোমাকে দেখছি বালি উত্তরপাড়া
তোমাকে দেখছি ব্যারাকপুরের মোড়ে
শহরে আসছে ওই তো সোনার ভোর
আসলে কিন্তু তোমার ট্রেন এই চড়ে

তোমাকে দেখছি সেন্ট পলস এর চুড়ো
তোমাকে দেখছি হো চি মিন সরণীতে
নেলসন ম্যান্ডেলা উদ্যানে দেখি
আসলে কিন্তু তোমাকে আচম্বিতে

তোমাকে দেখছি চিত্পুর ব্যান্ড পার্টি
তোমাকে দেখছি ট্রাম্পেট ক্ল্যারিনেটে
বিটন ঘুরিয়ে ব্যান্ড মাস্টার যাবে
আসলে কিন্তু তোমার দিকেই হেঁটে

তোমাকে দেখছি কুন্দঘাট গামী বাস এ
তোমাকে দেখছি গড়িয়া র দিকে গেলে
ঢাকুরিয়া ভুলে সেলিমপুর এই নামি
আসলে কিন্তু তোমাকেই দেখে ফেলে

তোমাকে দেখছি উল্টোডাঙ্গায় সোজা
তোমাকে দেখছি ফুটবল স্টেডিয়াম এ
দমদম ছোঁয়া বোয়িং বিমান গুলো
আসলে কিন্তু তোমার জন্যে নামে

নামলে বিমান রানওয়ে র মসৃন এ
বোয়িং কিম্বা রুস্কি ইলেউসিন
ককপিট থেকে পাইলট বুঝে নেন
এসে গেল তার তোমাকে দেখার দিন।

রাস্তা

চলছে আমার রাস্তা, রাস্তা উদ্দেশ্যহীন
উড়িয়ে যাচ্ছে হাইওয়ে জুড়ে আরও একটা দিন
আরও অনেক অনেক দূর পরের শহর
চলতে হবে আমায় রাত্রি ভোর
নেই যে আমার কোন অবসর
যদি খুঁজে পাওয়া যেত একটা ঘর।
আমি বেরিয়ে পড়েছিলাম ফেলে হাজার পিছু টান
ছিল না গন্তব্য, শুধু ছিল অনেক গান
সেই গান গুলো আজ গেছে কোথায় পড়ে
আমার অজান্তে রাস্তার ধারে
যদি খুঁজে পাওয়া যেত হঠাৎ করে
যদি খুঁজে পাওয়া যেত ঠিকানা।

কেউ কোথাও আছে আমার জন্য অপেক্ষায়,
কেউ কি বসে আছে আমার জন্য এ রাস্তায়?

একটা হারিয়ে যাওয়ার উন্মাদনা
স্বাধীন থাকার যে হাত
ভেঙ্গেছিলাম ঘর করে সম্পর্ক বরবাদ
সেই ঘরের উঠান ডাকছে আবার আমায়
সেই ঘরের গন্ধ, ঘরের উষ্ণতায়
একটা ফর্সা চাদর, ফর্সা বিছানায়,
একটা রেডিও তে ছেলেবেলার গান

ঝাপসা আমার হাইওয়ে, ঝাপসা আজ হৃদয়
ক্লান্ত এই শরীর আজ থেমে যেতে চায়
তবু এই রাস্তা সে তো থামতে দিবে না
এই রাস্তা কোথাও পৌঁছে দেবে না
এই ক্লান্তি সে তো রাস্তা ভাবে না
রাস্তা কেবল রাস্তাই থেকে যায়।

Saturday, August 3, 2013

অনন্ত প্রেম

তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার,
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া
তোমারি মুরতি এসে,
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।
আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে,
মিলনমধুর লাজে--
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।
আজি সেই চিরদিবসের প্রেম
অবসান লভিয়াছে
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে
সকল প্রেমের স্মৃতি--
সকল কালের সকল কবির গীতি।

অনেককালের যাত্রা আমার

অনেককালের যাত্রা আমার
অনেক দূরের পথে,
প্রথম বাহির হয়েছিলেম
প্রথম-আলোর রথে।
গ্রহে তারায় বেঁকে বেঁকে
পথের চিহ্ন এলেম এঁকে
কত যে লোক-লোকান্তরের
অরণ্যে পর্বতে।

সবার চেয়ে কাছে আসা
সবার চেয়ে দূর।
বড়ো কঠিন সাধনা, যার
বড়ো সহজ সুর।
পরের দ্বারে ফিরে, শেষে
আসে পথিক আপন দেশে-
বাহির-ভুবন ঘুরে মেলে
অন্তরের ঠাকুর।

"এই যে তুমি" এই কথাটি
বলব আমি ব'লে
কত দিকেই চোখ ফেরালেম
কত পথেই চ'লে।
ভরিয়ে জগৎ লক্ষ ধারায়
"আছ-আছ"র স্রোত বহে যায়
"কই তুমি কই" এই কাঁদনের
নয়ন-জলে গ'লে।