Saturday, April 27, 2013

আমাকে আমার মত থাকতে দাও

আমাকে আমার মত থাকতে দাও
আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি,
যেটা ছিলনা ছিলনা সেটা না পাওয়ায় থাক
সব পেলে নষ্ট জীবন।

তোমার ঐ দুনিয়ার ঝাপসা আলোয়
কিছু সন্ধ্যের গুড়ো হাওয়া কাঁচের মত,
যদি উড়ে যেতে চাও তবে গা ভাসিয়ে দাও
দুরবিন চোখ রাখবো না না না।

এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার,
তবু গল্প লিখছি বাঁচবার।
আমি রাখতে চাই না আর তার,
কোন রাত-দুপুরের আবদার।
তাই চেষ্টা করছি বার বার সাঁতরে পাড় খোঁজার।

কখনো আকাশ বেয়ে চুপ করে
যদি নেমে আসে ভালবাসা খুব ভোরে,
চোখ ভাঙ্গা ঘুমে তুমি খুঁজো না আমায়
আসে পাশে আমি আর নেই।

আমার জন্য আলো জ্বেলো নাকো কেউ
আমি মানুষের সমুদ্রে গুনেছি ঢেউ
এই স্টেশন চত্ত্বরে হারিয়ে গিয়েছি
শেষ ট্রেনে ঘরে ফিরবো না না না।

তোমার রক্তে আছে স্বপ্ন যত,
তারা ছুটছে রাত্রি-দিন নিজের মত,
কখনও সময় পেলে একটু ভেবো-
আঙ্গুলের ফাঁকে আমি কই?

হিসাবের ভিড়ে আমি চাই না ছুঁতে
যত শুকনো পেঁয়াজকলি ফ্রিজের শীতে,
আমি ওবেলার ডাল-ভাতে ফুরিয়ে গেছি
গেলাসের জলে ভাসবো না না না।

Friday, April 26, 2013

বাঁশুরিয়া

বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশী দেখি না তোমায়
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।

এ শহরে এসছো তুমি কবে কোন রাজ্য থেকে
তোমাদের দেশে বুঝি সব মানুষই বাঁশী শেখে,
আমাদের স্কুল কলেজে শেখে লোকে লেখা পড়া
প্রাণে গান নাই মিছে তাই রবি ঠাকুর মূর্তি গড়া,
তোমার ঐ দেহাতি গান দোলে যখন বাঁশির মুখে
আমাদের নকল ভণ্ড কৃষ্টি চালায় করাত বুকে,
বুকে আর গলায় আমার শহর কোলকাতায়
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।

ঠেলা ভ্যান চালাও তুমি কিম্বা ভাড়া গাড়ির ক্লিনার
ক'বছরে একবার যাও তোমার দেশের নদীর কিনার,
ফাক পেলে বাঁশী বাজাও ফেলে আসা ঘরের ডাকে
দেশে গিয়ে এমন সুরে হয়তো ডাকো কোলকাতাকে,
ফিরে এসে উদম খাটো গায়ে গতরে ব্যস্ত হাতে
মজুরিতে ভাগ বসাচ্ছে কারা তোমার কোলকাতাতে,
তাদেরই গাইয়ে আমি সাজানো জলসায়
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।

Thursday, April 25, 2013

পাগলা সানাই

হাত পেতে নিয়ে চেটে পুটে খাই
বিসমিল্লার পাগলা সানাই,
হাত পেতে নিয়ে চেটে পুটে খাই
স্মৃতি বিজরিত পাগলা সানাই।

ছোট্ট বেলায় শুনেছি প্রথম
কেউটে সানাই সুর পঞ্চম,
খেয়েছে লোকটা এই মাথাটাই
ধরেছে নেশায় খ্যাপাটে সানাই।

কৈশোরে দেখা আকাশ কুসুম
জানিনা কেন যে আসতো না ঘুম,
অচেনা কষ্ট কি যাচ্ছে তাই
রাতেরে নিয়েই শুনলে সানাই।

যৌবনে প্রেম যেই না এলো
জানিনা কেন যে কান্না পেলো,
সেই প্রেম আজ তোমায় জানাই
নাছোর বান্দা প্রেমিক সানাই।

গেল যৌবন মাঝ বয়সে
কান্না ঢাকতে শিখেছি হেসে,
হাসি কান্নার এই দু’টানায়
শেখালো্ আমাকে রসিক সানাই।

বিস্ময় আজও গেলোনা আমার
স্বপ্নে এখনও যৌথ খামার,
তোমার জন্য গানই বানাই
তোমার জন্য রইল সানাই।

Monday, April 22, 2013

নিষিদ্ধ ইস্তেহার

হাত থেকে হাতে বুক থেকে বুকে করে দেব গোপনে পাচার,
ভালবাসার নিষিদ্ধ ইস্তেহার, ভালবাসার নিষিদ্ধ ইস্তেহার।
আমি কি ডরাই আর ওদের ভ্রুকুটি, আজ আমার ছুটি,
সারাদিন প্যাম্ফলেট বুকে নিয়ে ফিরি তার গোপন লালিমা,
একদিন মুছে দেবে যুগের কালিমা।
তোমার বন্দী দেহে চুপি চুপি এনে দেব, কারামুক্তির সমাচার
ভালবাসার নিষিদ্ধ ইস্তেহার, ভালবাসার নিষিদ্ধ ইস্তেহার।

পরোয়া করি না, কার কোথায় পাহারা, আমার চেহারা,
ওদের ভালোই জানা, ওরা জানে কবেকার পোষা আক্রোশ,
আমার মগজে ঘোরে, চেনেনা আপোষ,
যতই লুকিয়ে থাকো, ওনয়ন ঢেকে রাখো,
ভেঙ্গে দেব দুর্গ তোমার, আমার দাবি নিষিদ্ধ ইস্তেহার,
ভালবাসার নিষিদ্ধ ইস্তেহার।

মানি না ওদের বিধি, কি ধানের তরী, আমি বিশ্রী,
একরোখা ক্ষতবিক্ষত এই মন, আমার স্বভাব,
মানো আর নাই মানো, তোমারো অভাব,
বরং স্বীকার কর, এসো এই হাত ধরো,
ঠোঁট রাখো শরীরে আমার, আমি তোমার নিষিদ্ধ ইস্তেহার,
ভালবাসার নিষিদ্ধ ইস্তেহার।

Sunday, April 21, 2013

আমাদের জন্য

গড়িয়াহাটার মোড়, মিনি মিনি বাস বাস,
বাসের টারমিনাসে, মন মরা সারি সারি
মুখ চোখ নাক হাত, রোগা রোগা চেহারার কনডাক্টার
সব আমাদেরই জন্য, সব আমাদেরই জন্য।

চৌরঙ্গীর আলো এবং লোড শেডিং,
পার্ক স্ট্রীট জমকালো, কাগজে হেডিং।
আমাদেরই জন্য, সব আমাদেরই জন্য।
বেদম ট্র্যাফিক জ্যাম, ঠান্ডা স্যালামি হ্যাম,
চকলেট, ক্যাডবেরি, মাদার ডেয়ারী,
আমাদেরই জন্য, সব আমাদেরই জন্য।

বাজারের দরাদরি, রুটি ভাত তরকারি,
সা নি ধা পা মা গা রে সা মাদার টেরেসা,
আমাদেরই জন্য, সব আমাদেরই জন্য।
কুঁয়াশা কুয়াশা কাদা, ভোর বেলা গলা সাধা,
সারেগা রেগামা গামা গামাপা মাপাধা পাধা পাধানি ধানিসা–
আমাদেরই জন্য, সব আমাদেরই জন্য।

ফুটবোর্ডে ঝুলে যাওয়া, অথবা লেডিজ সীট-
তাক্ করে উদাসীন, আকাশ কুসুম টিক্ টিক্-
টিকিট কাটতে গিয়ে ব্যাজার মানুষ, খুচ্-খুচরো পয়সা নেই
আমাদেরই জন্য, নেই আমাদেরই জন্য।

সা গা পা ধানি ধানি পাধানি, সানিধা নিধা পাগা সাগা পাধানি,
বছরে তিরিশবার চিত্রাঙ্গদা আর শ্যামা
শাপ-মোচনের অশ্রু মোচন, আমাদেরই জন্য।
গাজনের ছয়লাপ, আধুনিক কিং খাপ,
কিং সাইজ ভজনের শিবের গাজন, আমাদেরই জন্য।
সংস্কৃতির ঢাক, তে রে কে টে তাক্ তাক্
দমাদম দমাদম কৃষ্টি বিষম
আমাদেরই জন্য, সব আমাদেরই জন্য।
পাতাল রেলের খাল, ভাঙাচোরা দিন কাল,
পদে পদে ঠোক্কোর, বকর বকর,
আমাদেরই জন্য, সব আমাদেরই জন্য।

আপিস কাছারি রাইটার্স বিল্ডিং ডিং
বিনয় বাদল দিন্ দিনেশের নাম ধার,
ধর্মতলার মোড়ে লেন দেন নিন দিন লেনিন
আমাদেরই জন্য, সব আমাদেরই জন্য।

সুনীল গাঙ্গুলীর দিস্তে দিস্তে লেখা,
কত কবি মরে গেল চুপি চুপি একা একা,
আমাদেরই জন্য, শুধু আমাদেরই জন্য।
সিনথেসাইজারের টাপুর টুপুর
সুমন চাটুজ্যের এক ঘেয়ে সুর
নয় আমাদেরই জন্য, নয় আমাদেরই জন্য।

সত্যজিতের ছবি, শক্তির পদ্য,
লিটল ম্যাগাজিনের লেখা অনবদ্য।
গ্রুপ থিয়েটার আর একাদেমি সমাচার,
একুশে আইন আর গণেশ পাইন।
আমাদেরই জন্য, সব আমাদেরই জন্য।

কেরানী ও অফিসার পাটোয়ার নেতা,
ফুটপাথে ছোটো বড় ক্রেতা বিক্রেতা,
বেশ্যা দালাল, টিকিধারী পুরোহিত,
ট্যাকসি চালক আর পুলিশের খিট্ মিট্
আমাদেরই জন্য, সব আমাদেরই জন্য।

আমাদের জন্যেই ভোরের আকাশ,
লালচে পূবের কোণে আসে আশ্বাস।
আমাদের জন্যেই মিষ্টি সকাল,
নীলের গভীরে হাসে একা মহাকাল।
আমাদেরই জন্যেই বৃষ্টি এসেছে,
দারুণ প্রাণের টানে দুকুল ভেসেছে।
মৌমাছি খুঁজে মরে আমাদেরই মধু,
আকাশ ডাকছে আজ আমাদেরই শুধু।
সমুদ্রে ঢেউ ভাঙে আমাদেরই নামে,
শ্রমিকের দেহ ভেজে আমাদেরই ঘামে।
যে যেখানে লড়ে যায় আমাদেরই লড়া,
জীবনের কথা বলা গানের মহড়া যেন
সব্বার জন্যে, সব্বার জন্যে।

আমরাই কলকাতা আজ আগামীর,
আমরাই গান গাই আমির তুমির,
ইট কাঠ কংক্রীট শ্যাওলা ময়লা,
প্রতিটি নতুন গান মাসের পয়লা।
আমার জীবন থেকে উঠে আসা সুর
তোমাকে শুনিয়ে আমি যাব বহু দূর।
ফিরেও আসবো আমি তোমার সুবাসে,
থাকবো তোমার বুকে আর আসে পাশে।
আমাকে পড়লে মনে খুঁজো এইখানে,
এখানে খুঁজছি আমি জীবনের মানে।

ন’টায়

ন’টায় অফিস যাবার তাড়া
মাথার চুলগুলো সব খাড়া
ন’টায় রান্নাঘরে হুলুস্থুলু
গিন্নি মাতায় পাড়া।
ন’টায় ছেলেমেয়ের স্কুল
ন’টায় হারায় কানের দুল
আবার এই ন’টাতেই ছাদের টবে
আপনি ফোটে ফুল।

ন’টায় বড্ড সময় কম
ন’টায় সবাই রেগে বোম
ন’টায় তাড়াহুড়োয় ছিটকে পরে
জামায় আলুর দম।
ন’টায় ঘড়িটা ভীমরুল
ফোটায় দুম করে তার হুল
আবার এই ন’টাতেই ছাদের টবে
আপনি ফোটে ফুল ।

ন’টায় বাসে ট্রেনে ভীড়
দেখে গা করে চিড়বিড়
ন’টায় দুধ খেলে তা গুতোর চোটে
আপনা থেকেই ক্ষীর।
ন’টায় ভুলের পরে ভুল
ন’টায় ভাতের মধ্যে চুল
আবার এই ন’টাতেই ছাদের টবে
আপনি ফোটে ফুল।

Blowin' in the Wind

How many roads must a man walk down
Before you call him a man?
How many seas must a white dove sail
Before she sleeps in the sand?
Yes, how many times must the cannonballs fly
Before they're forever banned?
The answer my friend is blowin' in the wind
The answer is blowin' in the wind.

Yes, how many years can a mountain exist
Before it's washed to the sea?
Yes, how many years can some people exist
Before they're allowed to be free?
Yes, how many times can a man turn his head
Pretending he just doesn't see?
The answer my friend is blowin' in the wind
The answer is blowin' in the wind.

Yes, how many times must a man look up
Before he can really see the sky?
Yes, how many ears must one man have
Before he can hear people cry?
Yes, how many deaths will it take till he knows
That too many people have died?
The answer my friend is blowin' in the wind
The answer is blowin' in the wind.

উত্তরও তো জানা

কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়
কতটা পথ পেরোলে পাখি জিরোবে তার দায়
কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়
প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা।

কত বছর পাহাড় বাঁচে ভেঙ্গে যাবার আগে
কত বছর মানুষ বাঁচে পায়ে শিকল পড়ে
ক’বার তুমি অন্ধ সেজে থাকার অনুরাগে
বলবে তুমি দেখছিলে না তেমন ভালো করে।

কত হাজার বারের পর আকাশ দেখা যাবে
কতটা কান পাতলে পরে কান্না শোনা যাবে
কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে,
বড্ড বেশী মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে।

স্তব্ধতার গান

আজ আমি ফিরে এসেছি
তোমার পাশে বসেছি
বলো তোমার কথা শুনবো আজ
শুনবো বলে তাই রাখিনি কাজ
তোমার কথাহারা গান
যার ঠিকানা জানা নেই- জানা নেই
স্তব্দতার গান শুনো।

প্রতিটি ঘরে ঘরে আর দেয়ালে প্রতি রাস্তার
দেখেছি কথা বলে দার্শনিক
শুনেছি কথা ভরা মাঙ্গলিক
মানুষ মানুষের হাত ধরে
মুখর হতে চায় প্রাণ ভরে
তবু সে মুখরতার বুকে বাসা বাধে স্তব্ধতা – নীরবতা
স্তব্ধতার গান শুনো।

মানুষ কথা বলে যায়
কথার কথা বলে যায়
কথা বলে কথা না শুনেই
কথা শুনে কথা না শুনেই
কথার মানে থাকে না
থাকে না তার কোন দাম- কোন দাম
স্তব্ধতার গান শুনো।

আমার চোখে রাখো চোখ
কথার অবসান হোক
এখন আর কোন শব্দ নয়
এখন আর কোন কাব্য নয়
এখন তুমি আমি আর কোন কথায় বাধা নেই – বাধা নেই
স্তব্ধতার গান শুনো।

অজয় বাগদি

অজয় বাগদি ঝুলছে দেখ, মরুদ্যানের কয়েদখানায়
দড়ি জোগায় পার্টি-পুলিশ তারাই গণতন্ত্র বানায়।

নন্দীগ্রামের গান শুনলেই, মাওবাদী আর তেলেঙ্গানা
কবীর সুমন গান বেঁধেছি বাঁধবি কাকে, কয়েদখানা?

একনলা নয়, দোনলা নয়, নেহাৎ কিছু গানের সুরে
মাও-কবীরের দোহার এখন, লিরিক-বারুদ দিচ্ছে পুরে।

অজয় বাগদি জেলার ছেলে, বাগদি-ছেলের জ্যান্ত বুকে
নন্দীগ্রামের খবর এখন,হাওয়ার সঙ্গে যাচ্ছে ঢুকে।

তন্ত্র-গণ-তন্ত্র-গণ, মন্ত্র-গণ-সংসদীয়
অজয় তোমার ভোটটা এবার, পাচ্ছে কারা বাতলে দিও।

গানগুলো কি কালাশনিকভ? গানগুলো কি অন্তর্ঘাত?
বাগদি-ঘরের ছেলে, অজয়, প্রসন্ন নয় তোমার বরাত।

বরাত ভালো আমার বরং, বর্ণহিন্দু শহুরে প্রাণ।
চাটুজ্যেটা কবীর হলেও,শ্রেণীর গন্ধ আমার এ-গান।

জেহাদ ডাকছি, অজয়, শোনো,’হামলা’ বলো বিদ্রোহীরা
আমার গিটার কালাশনিকভ, হোক না বুড়ো আমার শিরা।

বদলা নেব গানেই আমি, কলির সন্ধ্যে এই তো সবে
পরের বারে দেখবি আমার,বাগদি-ঘরেই জন্ম হবে।

দশ ফুট বাই দশ ফুট

তক্তোপোষ বা মেঝেতে বিছানা, দড়িতে লুঙ্গি শাড়ি তিনখানা,
তারি এক পাশে পড়ে আধখানা, বেওয়ারিশ বাসি বিস্কুট।

দরজায় আছে নম্বর লেখা, তাই দেখে দেখে ঠিকানাটা শেখা।
যদিও বাসার আসল ঠিকানা, দশ ফুট বাই দশ ফুট।

জনা চারেকের বাসা এই ঘরে, পাঁচ জন হবে কিছুদিন পরে,
ঘ্যাঁশা ঘ্যাঁশি করে গায়ে গায়ে শুধু কুট্ কুট্।

খাওয়া বসা ঘুম একই যায়গায়, ছেলে মেয়ে দেখে আধো তন্দ্রায়,
বয়স্ক দুই দেহ মিলে যায়, আঁধার ঘনালে ঘুট্ ঘুট্।

রান্নাঘরটা খোঁড়া অজুহাত, ঘরণী সেখানে ছড়িয়েছে ভাত।
আরশোলাদের খুলেছে বরাত, রাতে ইঁদুরের খুট্ খুট্।

ছেলে বড় হয়ে বেকারীর গ্লানি, মেয়ে করে প্রেম বৃথা হয়রানি।
প্রেমিকের আছে টো টো কোম্পানি, শনিবার তারা দেয় ছুট্।

ছুটবে কোথায় প্রেম তাল কানা, গোপনীয়তার নেই মালিকানা।
এই প্রেমিকেরও আসল ঠিকানা, দশ ফুট্ বাই দশ ফুট্।।

হাল ছেড়ো না

ছেড়েছ তো অনেক কিছুই পুরনো অভ্যেস
অসুখ বিসুখ হবার পরে জিলিপি সন্দেশ
ছেড়েছ তো অনেক কিছুই পুরনো বোলচাল
পুরনো ঘর, পুরনো ঘর,কুড়োনো জঞ্জাল
হাল ছেড়ো না…
হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং কন্ঠ ছাড়ো জোরে
দেখা হবে তোমায় আমায় অন্য গানের ভোরে

ছেড়েছ তো অনেক কিছুই পুরনো সেই হাসি
সকাল বিকেল জানিয়ে দেয়া তোমায় ভালবাসি
স্বপ্নগুলো ছেড়েছ তো কয়েক বছর আগেই
আমার কিন্তু স্বপ্ন দেখতে আজও ভাল লাগে

আমারও তো বয়েস হচ্ছে,রাত বিরেতে কাশি
কাশির দমক থামলে কিন্তু বাঁচতে ভালোবাসি
বন্ধু তোমার ভালোবাসার স্বপ্নটাকে রেখো
বেছে নেবার স্বপ্নটাকে জাপটে ধরে থেকো
দিনবদলের স্বপ্নটাকে হারিয়ে ফেলো না
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

কখনও সময় আসে

কখনও সময় আসে জীবন মুচকি হাসে
ঠিক যেন প’ড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা
অনেক দিনের পর মিলে যাবে অবসর
আশা রাখি পেয়ে যাবো বাকি দু-আনা।

আশা নিয়ে ঘর করি
আশায় পকেট ভ’রি
প’ড়ে গেছে কোন্ ফাঁকে চেনা আধুলি
হিসেব মেলানো ভার
আয়-ব্যয় একাকার
চ’লে গেল সারাদিন এল গোধূলি।

সন্ধে নেবে লুটে
অনেকটা চেটেপুটে
অন্ধকারের তবু আছে সীমানা
সীমানা পেরোতে চাই
জীবনের গান গাই
আশা রাখি পেয়ে যাবো বাকি দু-আনা।

এসো প্রেম

এসো প্রেম পর যোদ্ধার সাজ
এসো চুম্বন গ্রেনেড হও
এসো ভালোবাসা আলোর সরাজ
আমার গানের আদর সও।

এসো বন্ধুরা আলোয় আধারে
এসো তুচ্ছতা দূর করে
নির্মূল হোক ওরা এই বারে
বেসুরে থাকছি সুর ধরে।

এসো মাটি ছুই নদীটাকে ছুই
এসো গাছপালা পাখির ডাক .
তিরিশ বছর এ মাটি বিভূঁই
আমার বাংলা আমার থাক।

এসো নবীনের চোখে বিদ্যুৎ
এসো প্রবীণের স্নেহের দান
ভালোবাসা আজও বড় অদ্ভুত
বৃষ্টির জলে পাখির চান।

পেটকাটি চাঁদিয়াল

পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগ্গা
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক, মাটিতে অবজ্ঞা।
বয়স বারো কি তেরো, রিকশা চালাচ্ছে,
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক ছেলেটাকে ডাকছে।
বয়স বারো কি তেরো, বড়জোর চোদ্দ,
রিকশা চালাতে শিখে নিয়েছে সে সদ্য।

ছেলেটার মন নেই প্যাডেলে বা চাক্কায়,
ঐ তো লেগেছে প্যাঁচ চাঁদিয়াল বগ্গায়।
শান্ দেওয়া মানজায়, বগ্গা ভো কাট্টা।
ছেলেটা চেঁচিয়ে ওঠে “এই নিয়ে আটটা”।
সওয়ার বাবুটি ভাবে, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বিচ্ছু ছোঁড়াটা বড় আস্তে চালাচ্ছে।
“ওই ছোঁড়া, আরে ওই ছোঁড়া ম’ল যা
আট্টা তো তোর কি ?”
সওয়ার বাবুটি দেন রেগে মেগে হুমকি।
বাবুর খ্যাঁকানি শুনে সম্বিত্ ফিরে পায়
ছেলেটা যে করে হোক রিক্শা চালিয়ে যায়।
এ কিশোর পারবে কি এই বোঝা টানতে ?
এই বাবু কোনো দিন পারবে কি জানতে ?
যে ছেলেটা প্রাণপণে রিক্শা চালাচ্ছে,
মুক্তির ঘুড়ি তাকে খবর পাঠাচ্ছে।

Tuesday, April 16, 2013

প্রথম সবকিছু

প্রথম স্কুলে যাবার দিন, প্রথমবার ফেল,
প্রথম ছুটি হাওড়া থেকে ছেলেবেলার রেল,
প্রথম খেলা লেকের মাঠে প্রথম ফুটবল,
মান্না, পিকে, চুনির ছবি- বিরাট সম্বল।

প্রথম শেখা ইমন রাগ প্রথম ঝাপ তাল,
প্রথম দেখা শহরজোড়া বিরাট হরতাল,
প্রথমবার লুকিয়ে টানা প্রথম সিগারেট,
প্রথমবার নিজামে গিয়ে কাবাব ভরপেট।
এই শহর জানে আমার প্রথম সবকিছু,
পালাতে চাই যতো সে আসে আমার পিছু পিছু।

প্রথম প্রেমে পরার পর সবাই পস্তায়,
হন্যে হয়ে ক্লাশ পালিয়ে ঘুরেছি রাস্তায়,
প্রথম প্রেম ঘুচে যাওয়ার যন্ত্রণাকে নিয়ে,
কান্না চেপে ঘুরেছিলাম তোমারই পথ দিয়ে।
এই শহর জানে আমার প্রথম সবকিছু,
পালাতে চাই যতো সে আসে আমার পিছু পিছু।

প্রথম দেখা লাল নিশান মিছিল কলতান,
প্রথম শোনা জনসভায় হেই ছামালো ধান,
প্রথম দেখা তরুণ লাশ চলছে ভেসে ভেসে,
দিনবদল করতে গিয়ে শহীদ হল শেষে।

প্রথম দেখা ভিখারিনীর কোলে শহীদ শিশু,
প্রথম দেখা আস্তাকুঁড়ে কলকাতার যীশু,
প্রথম দেখা দিন-দুপুরে পুলিশ ঘুস খায়,
প্রথম জানা পয়সা দিয়ে সবই কেনা যায়।
এই শহর জানে আমার প্রথম সবকিছু,
পালাতে চাই যতো সে আসে আমার পিছু পিছু।

প্রথম যৌবনের শেষে মাঝবয়েসে আসা,
গিটার নিয়ে গান ধরেছে আমার ভালোবাসা,
লজ্জা ঘৃণা রাগের পরে এটাও বুঝি থাকে,
এটাই দিব তোমায় আর এই শহরটাকে।

Farewell Angelina

Farewell Angelina
The bells of the crown
Are being stolen by bandits
I must follow the sound
The triangle tingles
And the trumpet play slow
Farewell Angelina
The sky is on fire
And I must go.

There's no need for anger
There's no need for blame
There's nothing to prove
Everything's still the same
Just a table standing empty
By the edge of the sea
Means, Farewell Angelina
The sky is trembling
And I must leave.

The jacks and queens
Have forsake the courtyard
Fifty-two gypsies
Now file past the guards
In the space where the deuce
And the ace once ran wild
Farewell Angelina
The sky is folding
I'll see you in a while.

See the cross-eyed pirates sitting
Perched in the sun
Shooting tin cans
With a sawed-off shotgun
And the neighbors they clap
And they cheer with each blast
But, Farewell Angelina
The sky's changing color
And I must leave fast.

King Kong, little elves
On the rooftoops they dance
Valentino-type tangos
While the make-up man's hands
Shut the eyes of the dead
Not to embarrass anyone
But, Farewell Angelina
The sky is embarrassed
And I must be gone.

The machine guns are roaring
The puppets heave rocks
The fiends nail time bombs
To the hands of the clocks
Call me any name you like
I will never deny it
But, Farewell Angelina
The sky is erupting
I must go where it's quiet.

কার দেশ

বাংলার ধনুকের ছিলায় ছিলায় যতো টান
তীরের ফলায় তবু বিষ নয়, লালনের গান
সে গানে বিদ্ধ বুক, রক্তে অশ্রু ছলোছলো
এ যদি আমার দেশ না হয় তো, কার দেশ বলো?

'শ্যামলে শ্যামল তুমি নীলিমায় নীল' রবি গানে
যে নদীর কুল নেই, সে স্রোতে বৈঠা যারা টানে
আব্বাসউদ্দীন দরিয়ায় ধরেছেন সুর
শাশ্বত বেহুলার ভালোবাসা, সিঁথির সিঁদুর
ভাষাশহীদের খুনে শিশির ও আরো লাল হলো
এ যদি আমার দেশ না হয় তো, কার দেশ বলো?

স্মৃতিতে এখনো শুনি বঙ্গবন্ধুর আহ্বান
পূবের আকাশ ছুঁয়ে শান্তিতে ভোরের আজান
একুশের হাত ধরে চেতনার হয় হাতেখড়ি
বাংলা দেখলে আমি এখনো 'বাংলাদেশ' পড়ি
মুক্তিযুদ্ধ ডাকে আগামীর দিকে হেঁটে চলো
এ যদি আমার দেশ না হয় তো, কার দেশ বলো?

ছাড়পত্র

যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুম:
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চীৎকারে।

খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।

সে ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।

আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের-
পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।

এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে।
চলে যেতে হবে আমাদের।

চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য ক'রে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

অবশেষে সব কাজ সেরে,
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।।

একুশে আইন

শিবঠাকুরের আপন দেশে ,
আইন কানুন সর্বনেশে!
কেউ যদি যায় পিছলে প'ড়ে,
প্যায়দা এসে পাক্‌‌ড়ে ধরে ,
কাজির কাছে হয় বিচার-
একুশ টাকা দন্ড তার।।

সেথায় সন্ধে ছটার আগে
হাঁচতে হলে টিকিট লাগে
হাঁচলে পরে বিন্ টিকিটে
দম‌্দমাদম্ লাগায় পিঠে ,
কোটাল এসে নস্যি ঝাড়ে-
একুশ দফা হাচিয়ে মারে।।

কারুর যদি দাতটি নড়ে,
চার্‌টি টাকা মাশুল ধরে ,
কারুর যদি গোঁফ গজায় ,
একশো আনা ট্যাক্সো চায়-
খুঁচিয়ে পিঠে গুঁজিয়ে ঘাড়,
সেলাম ঠোকায় একুশ বার।।

চলতে গিয়ে কেউ যদি চায়
এদিক্ ওদিক্ ডাইনে বাঁয়,
রাজার কাছে খবর ছোটে,
পল্টনেরা লাফিয়ে ওঠে ,
দুপুরে রোদে ঘামিয়ে তায়-
একুশ হাতা জল গেলায়।।

যে সব লোকে পদ্য লেখে,
তাদের ধরে খাঁচায় রেখে,
কানের কাছে নানান্ সুরে
নামতা শোনায় একশো উড়ে,
সামনে রেখে মুদীর খাতা-
হিসেব কষায় একুশ পাতা।।

হঠাৎ সেথায় রাত দুপুরে
নাক ডাকালে ঘুমের ঘোরে,
অম্‌‌নি তেড়ে মাথায় ঘষে,
গোবর গুলে বেলের কষে,
একুশটি পাক ঘুরিয়ে তাকে-
একুশ ঘন্টা ঝুলিয়ে রাখে।।

বাংলাদেশ

তুমি মিশ্রিত লগ্ন মাধুরীর জলে ভেজায় কবিতায়
আছো সরোয়ার্দী, শেরেবাংলা, ভাসানীর শেষ ইচ্ছায়,
তুমি বঙ্গবন্ধুর রক্তে আগুন জ্বলা জ্বালাময়ী সে ভাষণ
তুমি ধানের শীষে মিশে থাকা শহীদ জিয়ার স্বপন।
তুমি ছেলে হারা মা জাহানারা ঈমামের একাত্তরের দিনগুলি
তুমি জসীম উদ্দিনের নকশী কাথার মাঠ, মুঠো মুঠো সোনার ধুলি,
তুমি তিরিশ কিংবা তার অধিক লাখো শহীদের প্রাণ
তুমি শহীদ মিনারে প্রভাত ফেরীর, ভাই হারা একুশের গান।

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি,
জন্ম দিয়েছ তুমি মাগো, তাই তোমায় ভালোবাসি।
আমার প্রানের বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
প্রানের প্রিয় মা তোকে, বড় বেশী ভালোবাসি।

তুমি কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা উন্নত মম্ শির
তুমি রক্তের কালিতে লেখা নাম, সাত শ্রেষ্ঠবীর,
তুমি সুরের পাখি আব্বাসের, দরদ ভরা সেই গান
তুমি আব্দুল আলীমের সর্বনাশা পদ্মা নদীর টান।
তুমি সুফিয়া কামালের কাব্য ভাষায় নারীর অধিকার
তুমি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের, শাণীত ছুরির ধার,
তুমি জয়নুল আবেদীন, এস এম সুলতানের রঙ তুলির আঁচড়
শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরীর নতুন দেখা সেই ভোর।

তুমি মিশ্রিত লগ্ন মাধুরীর জলে ভেজায় কবিতায়
তুমি বাঙ্গালীর গর্ব, বাঙ্গালীর প্রেম প্রথম ও শেষ ছোঁয়ায়,
তুমি বঙ্গবন্ধুর রক্তে আগুন জ্বলা জ্বালাময়ী সে ভাষন
তুমি ধানের শীষে মিশে থাকা শহীদ জিয়ার স্বপন।
তুমি একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে বেজে উঠ সুমধুর,
তুমি রাগে অনুরাগে মুক্তি সংগ্রামে সোনা ঝরা সেই রোদ্দুর
তুমি প্রতিটি পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার, অভিমানের সংসার
তুমি ক্রন্দন, তুমি হাসি, তুমি জাগ্রত শহীদ মিনার।

একটা থালায়

একটা থালায় চারটে রুটি
একটু আচার একটু ডাল,
একই থালায় দুজন খাবে
যুদ্ধ হয়ত আসছে কাল।

একটা মাঠে দু'জন সেপাই
দেশ বিভাগের সীমান্তে,
দু'জন আছে দুই দিকে
আর বন্ধু তারা অজান্তে।

তারা এদেশ ভাগ করেনি
দেয়নি কোথাও খুড়ির দাগ,
নেতারা সব ঝগড়া করেন
জলে কুমির ডেঙায় বাঘ।

ঝগড়া থাকে আড়াল করে
লাভের মাটি লাভের গুড়,
সীমান্তে দুই দেশের সেপাই
দেশপ্রেমের দিনমজুর।

দুই কাঁধে দুই বন্দুক
আর বুলেট বেশি খাবার কম,
রাজধানীতে হিসেব কষে
এদের নেতা ওদের যম।

যমের বাড়ি কাছেই আছে
অনেক দূরে নিজের ঘর,
দেশপ্রেমের নজির হল
এই চিতা আর ঐ কবর।

ক্ষিধের কিন্তু সীমান্ত নেই
নেই চিতা নেই কবরটাও,
যুদ্ধটাকে চিতায় তোল
যুদ্ধটাকেই কবর দাও।।