Saturday, February 22, 2014

জীবন সাগর

জীবন সাগরে বাইছি তরী
আমি একাকী ভাঙ্গা হাল ধরতে পারি,
এই অসময়ে কোন বন্ধুর হাত
ধরবে আমার হাত দেব পাড়ি।

সুজন বন্ধু সে কোথায় আছে
কেমন করে যে টানবে কাছে,
ঝড় তুফানে যে ঢেউ এর খেলায়
ভাসবে আমায় নিয়ে এই অবেলায়,
ঝড়ের মাদল এই ঢেউ এর দোলা
দুচোখ ভরে আমি দেখতে পারি,
বন্ধু তুমি থেকো আমার পাশে
হাতে হাত রেখে যেন চলতে পারি।

জীবন দুলছে দুলছি আমি
দুলছি তবুও আমি হাসতে জানি,
এক থেকে হাজারটা বন্ধু পেলে
হাজার কন্ঠে গান গাইতে পারি,
এইতো সময় বন্ধু চেনার
এসো সবাই মিলে জান কবুল করি,
জীবন যতই কেন ভয় দেখাক
সবাই মিললে তা সইতে পারি।

Saturday, February 15, 2014

আমার মতে

কতবার তোর আয়না ভেঙেচুরে ফিরে তাকাই,
আমার মতে তোর মতন কেউ নেই !
কতবার তোর কাঁচা আলোয় ভিজে গান শোনাই,
আমার মতে তোর মতন কেউ নেই !

এই মৃত মহাদেশে রোদ্দুর বারবার ,
হয়তো নদীর কোনো রেশ,
রাখতে পারিনি অবশেষ |
অথবা খেলায় সব হাতগুলো হারবার
পরেও খেলেছি এক দান , বুঝিনি কিসের এত টান !

কখনো চটি জামা ছেড়ে রেখে রাস্তায় এসে দাঁড়া !

তোর বাড়ির পথে যুক্তির সৈন্য,
যতটা লুকিয়ে কবিতায় , তারও বেশি ধরা পড়ে যায় |

তোর উঠোন জুড়ে বিশাল অঙ্ক ,
কষতে বারণ ছিল তাই, কিছুই বোঝা গেলনা প্রায় !

এক একটা দিন

এক একটা দিন বড় একা লাগে ।।
ঘুম চোখ খুলে দেখি-ভোর নেই আর ,
ভালো করে সকালটা, পাওয়া হয় না।
এক একটা দিন বড় একা লাগে!

এক একটা দিন বড় একা লাগে!
আঙ্গুলের ফাঁকে ধরা খোলা কলম,
গান বা তোমাকে চিঠি লেখা হয় না
এক একটা দিন বড় একা লাগে!

এক একটা দিন বড় একা লাগে!
এক একটা দিন বড় একা লাগে!
বিকেলে তোমার সাথে একলা ঘরে
কি কথা বলবো আমি ভেবে পাই না!

এক একটা রাত বড় একা লাগে।।
পাশ ফিরে শুলে খাট কঁকিয়ে উঠে
কান পেতে থাকি হাওয়া জেগে উঠে না
কান পেতে থাকি কেউ জেগে উঠে না…

তোমার জন্য

তোমার জন্য মেঘলা দুপুর,
অসময়ে বর্ষণ
তোমার জন্য ক্ষনে দেখা আলো
বিকেলের আয়োজন

তোমার জন্য সুর খুঁজে পায়
আমার একলা গান
এ মরুভূমিতে তোমার জন্য
আমার পুষ্পস্নান

ডেকে যাই তোমাকে,
শুধু বার বার ডেকে যাই..
বিধুর আকাশে সন্ধ্যা তারাটি
তোমাকে ভেবে সাজাই ।।

তোমার জন্য মিছিলে মিছিলে
স্লোগানের উঠা পড়া
তোমার জন্য ভোরের আকাশ
শিউলি গন্ধে ভরা ।।

তোমাকে ভেবে এ জীবনে লাগে
ঝড়ের ভীষণ টান
এ মরুভূমিতে তোমার জন্য
আমার পুষ্পস্নান

ডেকে যাই তোমাকে,
শুধু বার বার ডেকে যাই
শারদ আলোতে আগমনী গানে
তোমাকেই খুঁজে পাই ।।

তোমার জন্য তুচ্ছ করেছি
অপমান অভিমান
তোমার জন্য বেপরোয়া বুকে
ভালবাসা পাই প্রান ।।
তোমার জন্য ভরা বাহে ধান
নবান্নে অঘ্রাণ
এ মরুভূমিতে তোমার জন্য
আমার পুষ্পস্নান

ডেকে যাই তোমাকে,
শুধু বার বার ডেকে যাই
বার বার এসে হে জন্মভূমি
তোমাকে যেন পাই ।।

বার বার এসে হে জন্মভূমি
তোমাকে যেন পাই

ভাবতেই পারো

ভাবতেই পারো ক্লান্ত কোন দুপুরে
ধুলো মেখে মেখে বেজে ওঠা নূপুরে
সুর মেলে ডানা আকাশের উপরে

যাও যদি সুদূরপানে
চেনা কোন অন্যখানে
ভালবাসার মেঘে ঘেরা
আসবে যে আমার মনে

আজ তোমার মেঘে মেঘে রংধনু
আজ তোমার মেঘে মেঘে রং
আজ তুমি মেঘে মেঘে যেমন ইচ্ছে তেমন
ভালবাসা নিয়ে আসি আজ আমি
মেঘে মেঘে সারাক্ষণ

ভাবতেই পারো আলোর শেষে
সন্ধ্যা কেন মুচকি হেসে
সুদূরে যায় নিয়ে চলে
তোমার কথা আমায় বলে

ভাবতেই পারো আমরা দূরে
যেমন আছি বহুকাল ধরে
তবুও আজ মেঘের দেশে
শুধুই আমায় মনে পড়ে 

সুখহীন নিশিদিন পরাধীন হয়ে

সুখহীন নিশিদিন পরাধীন হয়ে ভ্রমিছ দীনপ্রাণে।
সতত হায় ভাবনা শত শত,   নিয়ত ভীত পীড়িত--
শির নত কত অপমানে ॥
জানো না রে অধ-ঊর্ধ্বে বাহির-অন্তরে
ঘেরি তোরে নিত্য বাজে সেই অভয়-আশ্রয়।
তোলো আনত শির, ত্যজো রে ভয়ভার,
সতত সরলচিতে চাহো তাঁরি প্রেমমুখপানে ॥

মনে পড়ে সেই

মনে পড়ে সেই সুপুরি গাছের সারি
তারপাশে মৃদু জ্যোত্‌স্না-মাখানো গ্রাম,
মাটির দেয়ালে গাঁথা আমাদের বাড়ি
ছোট ছোট সুখে সিদ্ধ মনোস্কাম।

পড়শি নদীটি ধনুকের মত বাঁকা
উরু-ডোবা জলে সারাদিন খুনসুটি,
বাঁশের সাঁকোটি শিশু শিল্পীর আঁকা
হেলানো বটের গায়ে দোল খায় ছুটি

এপারে-ওপারে ঢিল ছুঁড়ে ডাকাডাকি
ও দিকের গ্রামে রোদ্দুর কিছু বেশি,
ছায়া ঠোঁটে নিয়ে উড়ে যায় কটি পাখি
ভরা নৌকায় গান গায় ভিনদেশী।

আমার বন্ধু আজানের সুরে জাগে
আমার দুচোখে তখনো স্বপ্নলতা,
ভোরের কুসুম ওপারে ফুটেছে আগে
এপারে শিশিরপতনের নীরবতা।

আমার বন্ধু বহু ঝগড়ার সাথি
কথায় কথায় এই ভাব এই আড়ি,
মার কাছে গিয়ে পাশাপাশি হাত পাতি
গাব গাছে উঠে সে হাতেই কাড়াকাড়ি।

আমার বন্ধু দুনিয়াদারির রাজা
মিথ্যে কথায়  জগৎ  সভায় সেরা,
দোষ না করেও পিঠ পেতে নেয় সাজা
আমি দেখি তার সহাস্য মুখে ফেরা।

বন্ধু হারালে দুনিয়াটা খাঁ খাঁ করে
ভেঙে যায় গ্রাম, নদীও শুকনো ধূ ধূ,
খেলার বয়েস পেরোলেও একা ঘরে
বারবার দেখি বন্ধুরই মুখ শুধু।

সাঁকোটির কথা মনে আছে, আনোয়ার ?
এত কিছু গেল, সাঁকোটি এখনো আছে,
এপার ওপার স্মৃতিময় একাকার
সাঁকোটি দুলছে এই আমি-তোর কাছে।

না মানুষি বনে

সখি বল আমারে বল
কে পরাইলো আমার চোখে কলঙ্ক কাজল,
আমি যার কাছে যাই সে আমারে কতো মন্দ বলে
আমার ইচ্ছা করে ডুইবা মরি নিজের চোখের জলে।

আমি ঘর ছাড়িলাম বনে গেলাম, বনে মানুষ নাই
না মানুষি বনে যদি তোমার দেখা পাই,
জংলা গাছে হাজার পাখি বন্ধু তুমি নাই
বন্ধু তুমি নাই নাই নাই কাছে নাই,
বনের গাছ- সেও আমারে আজ মন্দ বলে
আমার ইচ্ছা করে ডুইবা মরি নিজের চোখের জলে।

আমি বন ছাড়িলাম মাঠে গেলাম, মাঠে মানুষ নাই
না মানুষি মাঠে যদি তোমার দেখা পাই,
খোলা মাঠের ঘূর্ণি হাওয়া ফিসফিসাইয়া কয়
"কলঙ্কিনী মেয়ে, পাশে কেউ থাকিবার নয়",
সইন্ধ্যাকালে বিরানমাঠে চিনের আগুন জ্বলে
আমার ইচ্ছা করে ডুইবা মরি নিজের চোখের জলে।

বন্ধু বল আমারে বল
আমার চক্ষে কেন্ মাখাইলি কলঙ্ক কাজল।

বোকা মেয়ে

তোর বুঝি ভেঙে গেছে মাথা নাড়া বুড়ো
ভেঙে গেছে পুতুল খেলার সংসার,
সময়ে দেখবি সব জোড়া লেগে যাবে
চুপ কর বোকা মেয়ে কাঁদিস না আর।

সময় দেখবি সব ভুলায় ভুলিয়ে
আনকোরা রংগুলো বুলিয়ে বুলিয়ে,
মিলায় কাঁটার দাগ জোড়া লাগে ফাটা
জটিলতা হয়ে যায় খুব সাদামাটা।

তোর বুঝি উড়ে গেছে খাঁচা খোলা পাখি
উড়ে গেছে আকাশের হৃদয় অপার,
সময়ে দেখবি তুই নিজেই পালাবি
চুপ কর বোকা মেয়ে কাঁদিস নে আর।

সময় দেখবি সব খাঁচা খুলে দেয়
তারগুলো কেটে দেয় অদৃশ্য ছুরি,
ভাবনার পাখিগুলো বয়েসের ডালে
বসে আর উড়ে যায় খেলে লুকোচুরি।

থমকে আছে

থমকে আছে চোখের নিচে
অনেকখানি চোখের জল।
চোখের ওপর রঙ্গ বন্ধু-
হালকা হাসির গল্প বল্‌।

তোর চোখে চোখ রাখলে যেন
জলের ওপর সূর্যোদয়!
তুই না বুঝিস, বয়েই গেলো-
আমার চোখেই সকাল হয়।

সকালটাকে ভিজিয়ে দিল
শিশির হয়ে চোখের জল।
শিশিরে রঙ ঠিঁকরে পড়ে,
বন্ধু আলোর গল্প বল।

অনেক রকম মানুষ দেখি,
অনেক রকম তাদের চোখ।
অন্ধকারে চাইছি আমি-
সবার চোখেই সকাল হোক।

সকালটাকে আগলে রেখে
বিকেলটাকে ডাকবো চল।
সন্ধ্যে হ’লেই বলবো বন্ধু-
চোখের জলের গল্প বল!

ডাক আসে

ডাক আসে,
তোমার না লেখা চিঠি
আসেনি, আসেনা, আসবেনা
জানি তবু আমি বসে থাকি,
বেলা বাড়ে,
রোদে কাপড় মেলি
জল নামে যদি তুলি,
ঘরে তুলে আনি আর
তুলি মেলি ভাজ করি...

দিন যায়, দিন যায়,
দুপুরের অবসরে খবর কাগজে দেখি,
এখানে ওখানে কত যুদ্ধ চলেছে
চলে সারবাঁধা ট্যাংক গাড়ি,
রিফিউজি লাইন চলে সাদা দেশদূত
আর যুদ্ধবিরোধী ক্ষ্যাপা...

রাত নামে, রাত নামে
রাতের গভীরে আমি
ঘুমের ভিতরে আমি
ভিতর বাহির করি
জামা তুলি মেলি,
আর মানুষ মিছিলে হাঁটি
রাতের অন্ধকারে
কাঁটাতার ঘিরে ঘিরে ধরে...

গান এসো গান এসো, গান এসো গান এসো,
গান এসো গান এসো,
একলা আঁধার ঘরে এসো তুমি প্রেম হয়ে
প্রেম যদি না হও
স্বপ্ন দেখাও তুমি
স্বপ্ন না দিতে পার
দুধ পোড়া ঘ্রাণ হয়ো
রোদে পোড়া জামা আহা
পোড়া দেহ দেশ হয়ো...

গুলি লাগে গানের শরীরে...

একটুর জন্য

একটুর জন্য কতকিছু হয়নি,
ক্ষয়ে যাওয়া আশা তবু, পুরোটা ফুরায়নি।
একটুর জন্য, পাশ নম্বর নেই,
ফেল করা আশা তবু, ফাঁকতালে থাকবেই।

একটুর জন্য, চাকরিটা হল না,
আধমরা আশা তবু, পুরোপুরি মলো না।
একটুর জন্য, প্রেম দিল চম্পট,
তবুও হৃদয় করে আশা নিয়ে ছটফট।

একটুর জন্য, কাঁচকলা জুটল,
থমথমে মুখে তবু, হাসিটাও ফুটল।
একটুর জন্য, হাসি টাকে রাখছি,
দুরাশায় হোক তবু, আশাতেই থাকছি।

Thursday, February 6, 2014

নিভন্ত এই চুল্লি

নিভন্ত এই চুল্লিতে মা একটু আগুন দে,
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি, বাঁচার আনন্দে।
নোটন নোটন পায়রাগুলি খাঁচাতে বন্দী,
দু’এক মুঠো ভাত পেলে তা ওড়াতে মন দি।
হায় তোকে ভাত দিই  কী করে যে ভাত দিই হায়
হায় তোকে ভাত দেব কী দিয়ে যে ভাত দেব হায়।
নিভন্ত এই চুল্লী তবে একটু আগুন দে,
হাড়ের শিরায় শিখার মাতন মরার আনন্দে।
দুপারে দুই রুই কাতলার মারণী ফন্দী,
বাঁচার আশায় হাত-হাতিয়ার, মৃত্যুতে মন দি।
বর্গী না টর্গী না, যমকে কে সামলায় !
ধার-চকচকে থাবা ঐ দেখছ না হামলায় ?
আরে যাস্ নে ও হামলায়, যাস্ নে॥
কান্না কন্যার মায়ের ধমনীতে আকুল ঢেউ তোলে, জ্বলে না,
মায়ের কান্নায় মেয়ের রক্তের উষ্ণ হাহাকার মরে না,
চলল মেয়ে রণে চলল।
বাজে না ডম্বরু, অস্ত্র ঝন্ ঝন্ করে না, জানল না কেউ
চলল মেয়ে রণে চলল।
পেশীর দৃঢ় ব্যাথা, মুঠোর দৃঢ় কথা, চোখের দৃঢ় জ্বালা সঙ্গে নিয়ে,
চলল মেয়ে রণে চলল।
নেকড়ে-ওজর মৃত্যু এল, মৃত্যুরই গান গা,
মায়ের চোখে বাপের চোখে, দু-তিনটে গঙ্গা।
দূর্বাতে তার রক্ত লেগে, সহস্র সঙ্গী,
জাগে ধক্ ধক্, যজ্ঞে ঢালে, সহস্র মণ ঘি।
যমুনাবতী সরস্বতী, কাল যমুনার বিয়ে,
যমুনা তার বাসর রচে বারুদ বুকে দিয়ে, বিষের টোপর নিয়ে।
যমুনাবতী সরস্বতী গেছে এ পথ দিয়ে,  দিয়েছে পথ, গিয়ে।
নিভন্ত এই চুল্লীতে বোন আগুন ফলেছে।