Monday, August 9, 2010

Darkness

I had a dream, which was not all a dream.
The bright sun was extinguished, and the stars
Did wander darkling in the eternal space,
Ray-less, and pathless, and the icy Earth
Swung blind and blackening in the moonless air;
Morn came and went—and came, and brought no day,
And men forgot their passions in the dread
Of this their desolation; and all hearts
Were chilled into a selfish prayer for light:
And they did live by watchfires—and the thrones,
The palaces of crownéd kings—the huts,
The habitations of all things which dwell,
Were burnt for beacons; cities were consumed,
And men were gathered round their blazing homes
To look once more into each other's face;
Happy were those who dwelt within the eye
Of the volcanos, and their mountain-torch:
A fearful hope was all the World contained;
Forests were set on fire—but hour by hour
They fell and faded—and the crackling trunks
Extinguished with a crash—and all was black.
The brows of men by the despairing light
Wore an unearthly aspect, as by fits
The flashes fell upon them; some lay down
And hid their eyes and wept; and some did rest
Their chins upon their clenchéd hands, and smiled;
And others hurried to and fro, and fed
Their funeral piles with fuel, and looked up
With mad disquietude on the dull sky,
The pall of a past World; and then again
With curses cast them down upon the dust,
And gnashed their teeth and howled: the wild birds shrieked,
And, terrified, did flutter on the ground,
And flap their useless wings; the wildest brutes
Came tame and tremulous; and vipers crawled
And twined themselves among the multitude,
Hissing, but stingless—they were slain for food:
And War, which for a moment was no more,
Did glut himself again:—a meal was bought
With blood, and each sate sullenly apart
Gorging himself in gloom: no Love was left;
All earth was but one thought—and that was Death,
Immediate and inglorious; and the pang
Of famine fed upon all entrails—men
Died, and their bones were tombless as their flesh;
The meagre by the meagre were devoured,
Even dogs assailed their masters, all save one,
And he was faithful to a corse, and kept
The birds and beasts and famished men at bay,
Till hunger clung them, or the dropping dead
Lured their lank jaws; himself sought out no food,
But with a piteous and perpetual moan,
And a quick desolate cry, licking the hand
Which answered not with a caress—he died.
The crowd was famished by degrees; but two
Of an enormous city did survive,
And they were enemies: they met beside
The dying embers of an altar-place
Where had been heaped a mass of holy things
For an unholy usage; they raked up,
And shivering scraped with their cold skeleton hands
The feeble ashes, and their feeble breath
Blew for a little life, and made a flame
Which was a mockery; then they lifted up
Their eyes as it grew lighter, and beheld
Each other's aspects—saw, and shrieked, and died—
Even of their mutual hideousness they died,
Unknowing who he was upon whose brow
Famine had written Fiend. The World was void,
The populous and the powerful was a lump,
Season-less, herbless, treeless, manless, lifeless—
A lump of death—a chaos of hard clay.
The rivers, lakes, and ocean all stood still,
And nothing stirred within their silent depths;
Ships sailorless lay rotting on the sea,
And their masts fell down piecemeal: as they dropped
They slept on the abyss without a surge—
The waves were dead; the tides were in their grave,
The Moon, their mistress, had expired before;
The winds were withered in the stagnant air,
And the clouds perished; Darkness had no need
Of aid from them—She was the Universe.

Solitude

To sit on rocks, to muse o'er flood and fell,
To slowly trace the forest's shady scene,
Where things that own not man's dominion dwell,
And mortal foot hath ne'er or rarely been;
To climb the trackless mountain all unseen,
With the wild flock that never needs a fold;
Alone o'er steeps and foaming falls to lean;
This is not solitude, 'tis but to hold
Converse with Nature's charms, and view her stores unrolled.

But midst the crowd, the hurry, the shock of men,
To hear, to see, to feel and to possess,
And roam alone, the world's tired denizen,
With none who bless us, none whom we can bless;
Minions of splendour shrinking from distress!
None that, with kindred consciousness endued,
If we were not, would seem to smile the less
Of all the flattered, followed, sought and sued;
This is to be alone; this, this is solitude!

পুরাতন ভৃত্য

ভূতের মতন চেহারা যেমন , নির্বোধ অতি ঘোর ।
যা - কিছু হারায় , গিন্নি বলেন , ‘ কেষ্টা বেটাই চোর । '
উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত , শুনেও শোনে না কানে ।
যত পায় বেত না পায় বেতন , তবু না চেতন মানে ।
বড়ো প্রয়োজন , ডাকি প্রাণপণ , চীৎকার করি ‘ কেষ্টা ' —
যত করি তাড়া , নাহি পাই সাড়া , খুঁজে ফিরি সারা দেশটা
তিনখানা দিলে একখানা রাখে , বাকি কোথা নাহি জানে —
একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে তিনখানা ক ' রে আনে ।
যেখানে সেখানে দিবসে দুপুরে নিদ্রাটি আছে সাধা —
মহাকলরবে গালি দেই যবে ‘ পাজি হতভাগা গাধা ' —
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে হাসে , দেখে জ্বলে যায় পিত্ত !
তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার — বড়ো পুরাতন ভৃত্য ।

ঘরের কর্ত্রী রুক্ষমূর্তি বলে , ‘ আর পারি নাকো !
রহিল তোমার এ ঘর দুয়ার , কেষ্টারে লয়ে থাকো ।
না মানে শাসন ; বসন বাসন অশন আসন যত
কোথায় কী গেল ! শুধু টাকাগুলো যেতেছে জলের মতো ।
গেলে সে বাজার সারা দিনে আর দেখা পাওয়া তার ভার —
করিলে চেষ্টা কেষ্টা ছাড়া কি ভৃত্য মেলে না আর !
শুনে মহা রেগে ছুটে যাই বেগে , আনি তার টিকি ধরে ;
বলি তারে , ‘ পাজি , বেরো তুই আজই , দূর করে দিনু তোরে ! '
ধীরে চলে যায় , ভাবি গেল দায় ; পরদিনে উঠে দেখি
হুঁকাটি বাড়ায়ে রয়েছে দাঁড়ায়ে বেটা বুদ্ধির ঢেঁকি ।
প্রসন্নমুখ , নাহি কোনো দুখ , অতি - অকাতর চিত্ত !
ছাড়ালে না ছাড়ে , কী করিব তারে মোর পুরাতন ভৃত্য ।

সে বছরে ফাঁকা পেনু কিছু টাকা করিয়া দালালগিরি ।
করিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন বারেক আসিব ফিরি ।
পরিবার তায় সাথে যেতে চায় , বুঝায়ে বলিনু তারে
পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য , নহিলে খরচ বাড়ে ।
লয়ে রশারশি করি কষাকষি পোঁটলাপুঁটলি বাঁধি
বলয় বাজায়ে বাক্স সাজায়ে গৃহিণী কহিল কাঁদি ,
‘ পরদেশে গিয়ে কেষ্টারে নিয়ে কষ্ট অনেক পাবে । '
আমি কহিলাম ‘ আরে রাম রাম ! নিবারণ সাথে যাবে । '

রেলগাড়ি ধায় ; হেরিলাম হায় নামিয়া বর্ধমানে
কৃষ্ণকান্ত অতি প্রশান্ত তামাক সাজিয়া আনে ।
স্পর্ধা তাহার হেনমতে আর কত বা সহিব নিত্য !
যত তারে দুষি তবু হনু খুশি হেরি পুরাতন ভৃত্য ।
নামিনু শ্রীধামে , দক্ষিণে বামে পিছনে সমুখে যত
লাগিল পান্ডা , নিমেষে প্রাণটা করিল কণ্ঠাগত ।
জন ছয় সাতে মিলি একসাথে পরমবন্ধুভাবে
করিলাম বাসা , মনে হল আশা আরামে দিবস যাবে ।
কোথা ব্রজবালা ! কোথা বনমালা ! কোথা বনমালী হরি !
কোথা হা হন্ত , চিরবসন্ত ! আমি বসন্তে মরি ।
বন্ধু যে যত স্বপ্নের মতো বাসা ছেড়ে দিল ভঙ্গ —
আমি একা ঘরে ব্যাধি - খরশরে ভরিল সকল অঙ্গ ।
ডাকি নিশিদিন সকরুণ ক্ষীণ , ‘ কেষ্ট , আয় রে কাছে ।
এত দিনে শেষে আসিয়া বিদেষে প্রাণ বুঝি নাহি বাঁচে । '
হেরি তার মুখ ভরে ওঠে বুক , সে যেন পরম বিত্ত ।
নিশিদিন ধরে দাঁড়ায়ে শিয়রে মোর পুরতন ভৃত্য ।

মুখে দেয় জল , শুধায় কুশল , শিরে দেয় মোর হাত ;
দাঁড়ায়ে নিঝুম , চোখে নাই ঘুম , মুখে নাই তার ভাত ।
বলে বার বার , ‘ কর্তা , তোমার কোনো ভয় নাই , শুন ,
যাবে দেশে ফিরে মাঠাকুরানীরে দেখিতে পাইবে পুন । '
লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম ; তাহারে ধরিল জ্বরে —
নিল সে আমার কালব্যাধিভার আপনার দেহ - ' পরে ।
হয়ে জ্ঞানহীন কাটিল দু দিন , বন্ধ হইল নাড়ী —
এতবার তারে গেনু ছাড়াবারে , এতদিনে গেল ছাড়ি ।
বহুদিন পরে আপনার ঘরে ফিরিনু সারিয়া তীর্থ —
আজ সাথে নেই চিরসাথী সেই মোর পুরাতন ভৃত্য ।

জুতা আবিষ্কার

কহিলা হবু, ‘শুন গো গোবুরায়,
কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র—
মলিন ধূলা লাগিবে কেন পায়
ধরণীমাঝে চরণ-ফেলা মাত্র?
তোমরা শুধু বেতন লহ বাঁটি,
রাজার কাজে কিছুই নাহি দৃষ্টি।
আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি,
রাজ্যে মোর একি এ অনাসৃষ্টি!
শীঘ্র এর করিবে প্রতিকার
নহিলে কারো রক্ষা নাহি আর।’

শুনিয়া গোবু ভাবিয়া হল খুন,
দারুণ ত্রাসে ঘর্ম বহে গাত্রে।
পণ্ডিতের হইল মুখ চুন,
পাত্রদের নিদ্রা নাহি রাত্রে।
রান্নাঘরে নাহিকো চড়ে হাঁড়ি,
কান্নাকাটি পড়িল বাড়িমধ্যে,
অশ্রুজলে ভাসায়ে পাকা দাড়ি
কহিলা গোবু হবুর পাদপদ্মে,
‘যদি না ধুলা লাগিবে তব পায়ে,
পায়ের ধুলা পাইব কী উপায়ে!’

শুনিয়া রাজা ভাবিল দুলি দুলি,
কহিল শেষে, ‘কথাটা বটে সত্য—
কিন্তু আগে বিদায় করো ধুলি,
ভাবিয়ো পরে পদধুলির তত্ত্ব।
ধুলা-অভাবে না পেলে পদধুলা
তোমরা সবে মাহিনা খাও মিথ্যে,
কেন বা তবে পুষিনু এতগুলা
উপাধি-ধরা বৈজ্ঞানিক ভৃত্যে?

আগের কাজ আগে তো তুমি সারো,
পরের কথা ভাবিয়ো পরে আরো,’
আঁধার দেখে রাজার কথা শুনি,
যতনভরে আনিল তবে মন্ত্রী
যেখানে যত আছিল জ্ঞানীগুণী
দেশে বিদেশে যতেক ছিল যন্ত্রী।
বসিল সবে চশমা চোখে আঁটি,
ফুরায়ে গেল উনিশ পিপে নস্য।
অনেক ভেবে কহিল, ‘গেলে মাটি
ধরায় তবে কোথায় হবে শস্য? '
কহিল রাজা, ‘তাই যদি না হবে,
পণ্ডিতেরা রয়েছ কেন তবে?’

সকলে মিলি যুক্তি করি শেষে
কিনিল ঝাঁটা সাড়ে সতেরো লক্ষ,
ঝাঁটের চোটে পথের ধুলা এসে
ভরিয়ে দিল রাজার মুখ ও বক্ষ।
ধুলায় কেহ মেলিতে নারে চোখ,
ধুলার মেঘে পড়িল ঢাকা সূর্য।
ধুলার বেগে কাশিয়া মরে লোক,
ধুলার মাঝে নগর হল উহ্য।
কহিল রাজা, ‘করিতে ধুলা দূর,
জগৎ হল ধুলায় ভরপুর!’

তখন বেগে ছুটিল ঝাঁকে ঝাঁক
মশক কাঁখে একুশ লাখ ভিস্তি।
পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাঁক,
নদীর জলে নাহিকো চলে কিস্তি।
জলের জীব মরিল জল বিনা,
ডাঙার প্রাণী সাঁতার করে চেষ্টা—
পাঁকের তলে মজিল বেচা-কিনা,
সর্দিজ্বরে উজাড় হল দেশটা।

কহিল রাজা, ‘এমনি সব গাধা
ধুলারে মারি করিয়া দিল কাদা!’
আবার সবে ডাকিল পরামর্শে;
বসিল পুন যতেক গুণবন্ত—
ঘুরিয়া মাথা হেরিল চোখে সর্ষে,
ধুলার হায় নাহিকো পায় অন্ত।
কহিল, ‘মহী মাদুর দিয়ে ঢাকো,
ফরাশ পাতি করিব ধুলা বন্ধ।’
কহিল কেহ, ‘রাজারে ঘরে রাখো,
কোথাও যেন থাকে না কোনো রন্ধ্র।
ধুলার মাঝে না যদি দেন পা
তা হলে পায়ে ধুলা তো লাগে না।’

কহিল রাজা, ‘সে কথা বড়ো খাঁটি,
কিন্তু মোর হতেছে মনে সন্ধ,
মাটির ভয়ে রাজ্য হবে মাটি
দিবসরাতি রইলে আমি বন্ধ।’
কহিল সবে, ‘চামারে তবে ডাকি
চর্ম দিয়া মুড়িয়া দাও পৃথ্বী।
ধূলির মহী ঝুলির মাঝে ঢাকি
মহীপতির রহিবে মহাকীর্তি।’
কহিল সবে, ‘হবে সে অবহেলে,
যোগ্যমত চামার যদি মেলে।’

রাজার চর ধাইল হেথা হোথা,
ছুটিল সবে ছাড়িয়া সব কর্ম।
যোগ্যমত চামার নাহি কোথা,
না মিলে তত উচিত-মতো চর্ম।
তখন ধীরে চামার-কুলপতি
কহিল এসে ঈষৎ হেসে বৃদ্ধ,
‘বলিতে পারি করিলে অনুমতি,
সহজে যাহে মানস হবে সিদ্ধ।

নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে
ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।’
কহিল রাজা, ‘এত কি হবে সিধে,
ভাবিয়া ম ' ল সকল দেশ-শুদ্ধ!’
মন্ত্রী কহে, ‘বেটারে শূল বিঁধে
কারার মাঝে করিয়া রাখো রুদ্ধ।’
রাজার পদ চর্ম-আবরণে
ঢাকিল বুড়া বসিয়া পদোপান্তে।
মন্ত্রী কহে, ‘আমারো ছিল মনে—
কেমনে বেটা পেরেছে সেটা জানতে।’
সেদিন হতে চলিল জুতা পরা—
বাঁচিল গোবু রক্ষা পেল ধরা।

বঙ্গবীর

ভুলুবাবু বসি পাশের ঘরেতে
নামতা পড়েন উচ্চস্বরেতে—
হিস্ট্রি কেতাব লইয়া করেতে
কেদারা হেলান দিয়ে
দুই ভাই মোরা সুখে সমাসীন,
মেজের উপরে জ্বলে কেরাসিন,
পড়িয়া ফেলেছি চ্যাপ্টার তিন—
দাদা এমে, আমি বিএ।

যত পড়ি তত পুড়ে যায় তেল,
মগজে গজিয়ে উঠে আক্কেল,
কেমন করিয়া বীর ক্রমোয়েল
পাড়িল রাজার মাথা
বালক যেমন ঠেঙার বাড়িতে
পাকা আমগুলো রহে গো পাড়িতে—
কৌতুক ক্রমে বাড়িতে বাড়িতে
উলটি ব’য়ের পাতা।

কেহ মাথা ফেলে ধর্মের তরে,
পরহিতে কারো মাথা খ’সে পড়ে,
রণভূমে কেহ মাথা রেখে মরে
কেতাবে রয়েছে লেখা।
আমি কেদারায় মাথাটি রাখিয়া
এই কথাগুলি চাখিয়া চাখিয়া
সুখে পাঠ করি থাকিয়া থাকিয়া,
পড়ে কত হয় শেখা!

পড়িয়াছি বসে জানলার কাছে
জ্ঞান খুঁজে কারা ধরা ভ্রমিয়াছে,
কবে মরে তারা মুখস্থ আছে
কোন্‌ মাসে কী তারিখে।
কর্তব্যের কঠিন শাসন
সাধ ক’রে কারা করে উপাসন,
গ্রহণ করেছে কণ্টকাসন,
খাতায় রেখেছি লিখে।

বড়ো কথা শুনি, বড়ো কথা কই,
জড়ো করে নিয়ে পড়ি বড়ো বই,
এমনি করিয়া ক্রমে বড়ো হই—
কে পারে রাখিতে চেপে!
কেদারায় বসে সারাদিন ধ’রে
বই প’ড়ে প’ড়ে মুখস্থ ক’রে
কভু মাথা ধরে কভু মাথা ঘোরে,
বুঝি বা যাইব ক্ষেপে।

ইংরেজ চেয়ে কিসে মোরা কম!
আমরা যে ছোটো সেটা ভারি ভ্রম;
আকারপ্রকার রকম-সকম
এতেই যা কিছু ভেদ।
যাহা লেখে তারা তাই ফেলি শিখে,
তাহাই আবার বাংলায় লিখে
করি কতমতো গুরুমারা টীকে,
লেখনীর ঘুচে খেদ।

মোক্ষমুলর বলেছে ‘আর্য’,
সেই শুনে সব ছেড়েছি কার্য,
মোরা বড়ো বলে করেছি ধার্য,
আরামে পড়েছি শুয়ে।
মনু না কি ছিল আধ্যাত্মিক,
আমরাও তাই— করিয়াছি ঠিক
এ যে নাহি বলে ধিক্‌ তারে ধিক্‌,
শাপ দি’ পইতে ছুঁয়ে।

কে বলিতে চায় মোরা নহি বীর,
প্রমাণ যে তার রয়েছে গভীর,
পূর্বপুরুষ ছুঁড়িতেন তীর
সাক্ষী বেদব্যাস।
আর-কিছু তবে নাহি প্রয়োজন,
সভাতলে মিলে বারো-তেরো জন
শুধু তরজন আর গরজন
এই করো অভ্যাস।

আলো-চাল আর কাঁচকলা-ভাতে
মেখেচুখে নিয়ে কদলীর পাতে
ব্রহ্মচর্য পেত হাতে হাতে
ঋষিগণ তপ ক’রে।
আমরা যদিও পাতিয়াছি মেজ,
হোটেলে ঢুকেছি পালিয়ে কালেজ,
তবু আছে সেই ব্রাহ্মণ তেজ
মনু-তর্জমা প’ড়ে।

সংহিতা আর মুর্গি -জবাই
এই দুটো কাজে লেগেছি সবাই,
বিশেষত এই আমরা ক’ভাই
নিমাই নেপাল ভূতো।
দেশের লোকের কানের গোড়াতে
বিদ্যেটা নিয়ে লাটিম ঘোরাতে,
বক্তৃতা আর কাগজ পোরাতে
শিখেছি হাজার ছুতো।

ম্যারাথন আর ধর্মপলিতে
কী যে হয়েছিল বলিতে বলিতে
শিরায় শোণিত রহে গো জ্বলিতে
পাটের পলিতে-সম।
মূর্খ যাহারা কিছু পড়ে নাই

তারা এত কথা কী বুঝিবে ছাই—
হাঁ করিয়া থাকে, কভু তোলে হাই—
বুক ফেটে যায় মম।
আগাগোড়া যদি তাহারা পড়িত
গারিবাল্‌ডির জীবনচরিত
না জানি তা হলে কী তারা করিত
কেদারায় দিয়ে ঠেস!
মিল ক’রে ক’রে কবিতা লিখিত,
দু-চারটে কথা বলিতে শিখিত,
কিছুদিন তবু কাগজ টিকিত
উন্নত হত দেশ।

না জানিল তারা সাহিত্যরস,
ইতিহাস নাহি করিল পরশ,
ওয়াশিংটনের জন্ম-বরষ
মুখস্থ হল নাকো।
ম্যাট্‌সিনি-লীলা এমন সরেস
এরা সে কথার না জানিল লেশ—
হা অশিক্ষিত অভাগা স্বদেশ,
লজ্জায় মুখ ঢাকো।

আমি দেখো ঘরে চৌকি টানিয়ে
লাইব্রেরি হতে হিস্ট্রি আনিয়ে
কত পড়ি, লিখি বানিয়ে বানিয়ে
শানিয়ে শানিয়ে ভাষা।
জলে ওঠে প্রাণ, মরি পাখা করে,
উদ্দীপনায় শুধু মাথা ঘোরে—
তবুও যা হোক স্বদেশের তরে
একটুকু হয় আশা।

যাক, পড়া যাক ‘ন্যাস্‌বি’ সমর—
আহা, ক্রমোয়েল, তুমিই অমর।
থাক্‌ এইখেনে, ব্যথিছে কোমর—
কাহিল হতেছে বোধ।
ঝি কোথায় গেল, নিয়ে আয় সাবু।
আরে, আরে এসো! এসো ননিবাবু,
তাস পেড়ে নিয়ে খেলা যাক গ্রাবু—
কালকের দেব শোধ!

আষাঢ়

নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে
তিল ঠাঁই আর নাহি রে ।
ওগো , আজ তোরা যাস নে ঘরের
বাহিরে ।
বাদলের ধারা ঝরে ঝর - ঝর ,
আউশের খেত জলে ভর - ভর ,
কালী - মাখা মেঘে ও পারে আঁধার
ঘনিয়েছে দেখ্‌ চাহি রে ।
ওগো , আজ তোরা যাস নে ঘরের
বাহিরে ।

ওই ডাকে শোনো ধেনু ঘনঘন ,
ধবলীরে আনো গোহালে ।
এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু
পোহালে ।
দুয়ারে দাঁড়ায়ে ওগো দেখ্‌ দেখি
মাঠে গেছে যারা তারা ফিরিছে কি ?
রাখাল - বালক কী জানি কোথায়
সারাদিন আজি খোয়ালে ।
এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু
পোহালে ।

শোনো শোনো ওই পারে যাবে ব'লে
কে ডাকিছে বুঝি মাঝিরে ।
খেয়া - পারাপার বন্ধ হয়েছে
আজি রে ।
পূবে হাওয়া বয় , কূলে নেই কেউ ,
দু কূল বাহিয়া উঠে পড়ে ঢেউ ,
দরদর বেগে জলে পড়ি জল
ছলছল উঠে বাজি রে ।

খেয়া - পারাপার বন্ধ হয়েছে
আজি রে ।
ওগো , আজ তোরা যাস নে গো তোরা
যাস নে ঘরের বাহিরে—
আকাশ আঁধার , বেলা বেশি আর
নাহি রে ।
ঝরঝর ধারে ভিজিবে নিচোল ,
ঘাটে যেতে পথ হয়েছে পিছল ,
ঐ বেণুবন দুলে ঘনঘন
পথপাশে দেখ্‌ চাহি রে ।
ওগো , আজ তোরা যাস নে ঘরের
বাহিরে ।

উর্বশী

নহ মাতা , নহ কন্যা , নহ বধূ , সুন্দরী রূপসী ,
হে নন্দনবাসিনী উর্বশী!
গোষ্ঠে যবে সন্ধ্যা নামে শ্রান্ত দেহে স্বর্ণাঞ্চল টানি
তুমি কোনো গৃহপ্রান্তে নাহি জ্বাল সন্ধ্যাদীপখানি ,
দ্বিধায় জড়িত পদে কম্প্রবক্ষে নম্রনেত্রপাতে
স্মিতহাস্যে নাহি চল সলজ্জিত বাসরশয্যাতে
স্তব্ধ অর্ধরাতে ।
উষার উদয়-সম অনবগুণ্ঠিতা
তুমি অকুণ্ঠিতা ।

বৃন্তহীন পুষ্প-সম আপনাতে আপনি বিকশি
কবে তুমি ফুটিলে উর্বশী!
আদিম বসন্তপ্রাতে উঠেছিলে মন্থিত সাগরে ,
ডান হাতে সুধাপাত্র বিষভাণ্ড লয়ে বাম করে ,
তরঙ্গিত মহাসিন্ধু মন্ত্রশান্ত ভুজঙ্গের মতো
পড়েছিল পদপ্রান্তে উচ্ছ্বসিত ফণা লক্ষ শত
করি অবনত ।
কুন্দশুভ্র নগ্নকান্তি সুরেন্দ্রবন্দিতা ,
তুমি অনিন্দিতা ।

কোনোকালে ছিলে না কি মুকুলিকা বালিকা-বয়সী
হে অনন্তযৌবনা উর্বশী!
আঁধার পাথারতলে কার ঘরে বসিয়া একেলা
মানিক মুকুতা লয়ে করেছিলে শৈশবের খেলা ,
মণিদীপদীপ্ত কক্ষে সমুদ্রের কল্লোলসংগীতে
অকলঙ্ক হাস্যমুখে প্রবাল-পালঙ্কে ঘুমাইতে
কার অঙ্কটিতে ।

যখনি জাগিলে বিশ্বে , যৌবনে গঠিতা ,
যুগযুগান্তর হতে তুমি শুধু বিশ্বের প্রেয়সী
হে অপূর্বশোভনা উর্বশী!
মুনিগণ ধ্যান ভাঙি দেয় পদে তপস্যার ফল ,
তোমারি কটাক্ষঘাতে ত্রিভুবন যৌবনচঞ্চল ,
তোমার মদির গন্ধ অন্ধবায়ু বহে চারি ভিতে ,
মধুমত্তভৃঙ্গসম মুগ্ধ কবি ফিরে লুব্ধচিতে
উদ্দাম সংগীতে ।
নূপুর গুঞ্জরি যাও আকুল-অঞ্চলা
বিদ্যুৎ-চঞ্চলা ।

সুরসভাতলে যবে নৃত্য কর পুলকে উল্লসি
হে বিলোলহিল্লোল উর্বশী ,
ছন্দে ছন্দে নাচি উঠে সিন্ধুমাঝে তরঙ্গের দল ,
শস্যশীর্ষে শিহরিয়া কাঁপি উঠে ধরার অঞ্চল ,
তব স্তনহার হতে নভস্তলে খসি পড়ে তারা —
অকস্মাৎ পুরুষের বক্ষোমাঝে চিত্ত আত্মহারা ,
নাচে রক্তধারা ।
দিগন্তে মেখলা তব টুটে আচম্বিতে
অয়ি অসম্‌বৃতে ।

স্বর্গের উদয়াচলে মূর্তিমতী তুমি হে উষসী ,
হে ভুবনমোহিনী উর্বশী!
জগতের অশ্রুধারে ধৌত তব তনুর তনিমা ,
ত্রিলোকের হৃদিরক্তে আঁকা তব চরণশোণিমা ।
মুক্তবেণী বিবসনে , বিকশিত বিশ্ব-বাসনার
অরবিন্দ-মাঝখানে পাদপদ্ম রেখেছ তোমার
অতি লঘুভার —
অখিল মানসস্বর্গে অনন্তরঙ্গিণী ,
হে স্বপ্নসঙ্গিনী ।

ওই শুন দিশে দিশে তোমা লাগি কাঁদিছে ক্রন্দসী
হে নিষ্ঠুরা বধিরা উর্বশী!
আদিযুগ পুরাতন এ জগতে ফিরিবে কি আর ,
অতল অকূল হতে সিক্তকেশে উঠিবে আবার ?
প্রথম সে তনুখানি দেখা দিবে প্রথম প্রভাতে
সর্বাঙ্গে কাঁদিবে তব নিখিলের নয়ন-আঘাতে
বারিবিন্দুপাতে —
অকস্মাৎ মহাম্বুধি অপূর্ব সংগীতে
রবে তরঙ্গিতে ।

ফিরিবে না , ফিরিবে না — অস্ত গেছে সে গৌরবশশী ,
অস্তাচলবাসিনী উর্বশী!
তাই আজি ধরাতলে বসন্তের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে
কার চিরবিরহের দীর্ঘশ্বাস মিশে বহে আসে ,
পূর্ণিমানিশীথে যবে দশ দিকে পরিপূর্ণ হাসি
দূরস্মৃতি কোথা হতে বাজায় ব্যাকুল-করা বাঁশি —
ঝরে অশ্রুরাশি ।
তবু আশা জেগে থাকে প্রাণের ক্রন্দনে —
অয়ি অবন্ধনে ।

মাঝি

আমার যেতে ইচ্ছে করে
নদীটির ওই পারে—
যেথায় ধারে ধারে
বাঁশের খোঁটায় ডিঙি নৌকো
বাঁধা সারে সারে।
কৃষাণেরা পার হয়ে যায়
লাঙল কাঁধে ফেলে;
জাল টেনে নেয় জেলে,
গোরু মহিষ সাঁৎরে নিয়ে
যায় রাখালের ছেলে।
সন্ধে হলে যেখান থেকে
সবাই ফেরে ঘরে
শুধু রাতদুপরে
শেয়ালগুলো ডেকে ওঠে
ঝাউডাঙাটার ‘পরে।
মা, যদি হও রাজি,
বড়ো হলে আমি হব
খেয়াঘাটের মাঝি।

শুনেছি ওর ভিতর দিকে
আছে জলার মতো।
বর্ষা হলে গত
ঝাঁকে ঝাঁকে আসে সেথায়
চখাচখী যত।
তারি ধারে ঘন হয়ে
জন্মেছে সব শর;
মানিক - জোড়ের ঘর,
কাদাখোঁচা পায়ের চিহ্ন
আঁকে পাঁকের ‘পর।
সন্ধ্যা হলে কত দিন মা,

দাঁড়িয়ে ছাদের কোণে
দেখেছি একমনে—
চাঁদের আলো লুটিয়ে পড়ে
সাদা কাশের বনে।
মা, যদি হও রাজি,
বড়ো হলে আমি হব
খেয়াঘাটের মাঝি।

এ - পার ও - পার দুই পারেতেই
যাব নৌকো বেয়ে।
যত ছেলেমেয়ে
স্নানের ঘাটে থেকে আমায়
দেখবে চেয়ে চেয়ে।
সূর্য যখন উঠবে মাথায়
অনেক বেলা হলে—
আসব তখন চলে
‘বড়ো খিদে পেয়েছে গো—
খেতে দাও মা' বলে।
আবার আমি আসব ফিরে
আঁধার হলে সাঁঝে
তোমার ঘরের মাঝে।
বাবার মতো যাব না মা,
বিদেশে কোন্‌ কাজে।
মা, যদি হও রাজি,
বড়ো হলে আমি হব
খেয়াঘাটের মাঝি।

ফাঁকি

বিনুর বয়স তেইশ তখন , রোগে ধরল তারে ।
ওষুধে ডাক্তারে
ব্যাধির চেয়ে আধি হল বড়ো ;
নানা ছাপের জমল শিশি , নানা মাপের কৌটো হল জড়ো ।
বছর দেড়েক চিকিৎসাতে করলে যখন অস্থি জরজর
তখন বললে , " হাওয়া বদল করো । "
এই সুযোগে বিনু এবার চাপল প্রথম রেলের গাড়ি ,
বিয়ের পরে ছাড়ল প্রথম শ্বশুরবাড়ি ।

নিবিড় ঘন পরিবারের আড়ালে আবডালে
মোদের হত দেখাশুনো ভাঙা লয়ের তালে ;
মিলন ছিল ছাড়া ছাড়া ,
চাপা হাসি টুকরো কথার নানান জোড়াতাড়া ।
আজকে হঠাৎ ধরিত্রী তার আকাশভরা সকল আলো ধরে
বর বধূরে নিলে বরণ করে ।
রোগা মুখের মস্ত বড়ো দুটি চোখে
বিনুর যেন নতুন করে শুভদৃষ্টি হল নতুন লোকে ।
রেল-লাইনের ওপার থেকে
কাঙাল যখন ফেরে ভিক্ষা হেঁকে ,
বিনু আপন বাক্স খুলে
টাকা সিকে যা হাতে পায় তুলে
কাগজ দিয়ে মুড়ে
দেয় সে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ।
সবার দুঃখ দূর না হলে পরে
আনন্দ তার আপনার ই ভার বইবে কেমন করে ।
সংসারের ঐ ভাঙা ঘাটের কিনার হতে
আজ আমাদের ভাসান যেন চিরপ্রেমের স্রোতে —
তাই যেন আজ দানে ধ্যানে
ভরতে হবে সে — যাত্রাটি বিশ্বে র কল্যাণে ।
বিনুর মনে জাগছে বারেবার
নিখিলে আজ একলা শুধু আমিই কেবল তার ;
কেউ কোথা নেই আর
শ্বশুর ভাশুর সামনে পিছে ডাইনে বাঁয়ে ;
সেই কথাটা মনে করে পুলক দিল গাঁয়ে ।
বিলাসপুরের ইস্টেশনে বদল হবে গাড়ি ;
তাড়াতাড়ি
নামতে হল । ছ-ঘণ্টা কাল থামতে হবে যাত্রিশালায় ,
মনে হল এ এক বিষম বালাই !
বিনু বললে , " কেন , এ তো বেশ । "
তার মনে আজ নেই যে খুশির শেষ ।
পথের বাঁশি পায়ে পায়ে তারে যে আজ করেছে চঞ্চলা —
আনন্দে তাই এক হল তার পৌঁছনো আর চলা ।
যাত্রিশালার দুয়ার খুলে আমায় বলে । —
" দেখো , দেখো , এক্কাগাড়ি কেমন চলে ।
আর দেখছ বাছুরটি ওই , আ মরে যাই , চিকন নধর দেহ ,
মায়ের চোখে কী সুগভীর স্নেহ ।
ওই যেখানে দিঘির উঁচু পাড়ি —
সিসু গাছের তলাটিতে পাঁচিলঘেরা ছোট্ট বাড়ি
ওই যে রেলের কাছে —
ইস্টেশনের বাবু থাকে ?— আহা ওরা কেমন সুখে আছে । "

যাত্রীঘরে বিছানাটা দিলেম পেতে ,
বলে দিলেম , " বিনু এবার চুপটি করে ঘুমোও আরামেতে । "
প্ল্যাটফরমে চেয়ার টেনে
পড়তে শুরু করে দিলেম ইংরেজি এক নভেল কিনে এনে ।
গেল কত মালের গাড়ি , গেল প্যাসেঞ্জার ,
ঘণ্টা তিনেক হয়ে গেল পার ।
এমন সময় যাত্রীদের দ্বারের কাছে
বাহির হয়ে বললে বিনু , " কথা একটা আছে । "
ঘরে ঢুকে দেখি কে - এক হিন্দুস্থানি মেয়ে
আমার মুখে চেয়ে
সেলাম করে বাহির হয়ে রইল ধরে বারান্দাটার থাম ।
বিনু বললে , " রুক্‌মিনী ওর নাম ।
ওই যে হোথায় কুয়োর ধারে সারবাঁধা ঘরগুলি
ওই খানে ওর বাসা আছে , স্বামী রেলের কুলি ;
তেরো শো কোন্‌ সনে
দেশে ওদের আকাল হল — স্বামী-স্ত্রী দুইজনে
পালিয়ে এল জমিদারের অত্যাচারে ।
সাত বিঘে ওর জমি ছিল কোন্‌-এক গাঁয়ে কী-এক নদীর ধারে — "
বাধা দিয়ে আমি বললেম হেসে ,
" রুক্‌মিনীর এই জীবনচরিত শেষ না হতেই গাড়ি পড়বে এসে ।
আমার মতে , একটু যদি সংক্ষেপেতে সার ো
অধিক ক্ষতি হবে না তায় কারো । "
বাঁকিয়ে ভুরু , পাকিয়ে চক্ষু , বিনু বললে খে পে —
' ক খ্‌ খোনো না , বলব না সংক্ষেপে ।
আপিস যাবার তাড়া তো নেই , ভাবনা কিসের তবে ।
আগাগোড়া সব শুনতেই হবে । "
নভেল-পড়া নেশাটুকু কোথায় গেল মিশে ।
রেলের কুলি র লম্বা কাহিনী সে
বিস্তারিত শুনে গেলেম আমি ।
আসল কথা শেষে ছিল , সেইটে কিছু দামি ।
কুলি র মেয়ের বিয়ে হবে , তাই
পেঁচে তাবিজ বাজুবন্ধ গড়িয়ে দেওয়া চাই ;
অনেক টেনেটুনে তবু পঁচিশ টাকা খরচ হবে তারি ;
সে ভাবনাটা ভারি
রুক্‌মিনীরে করেছে বিব্রত ।
তাই এবারের মতো
আমার ' পরে ভার
কুলি নারীর ভাবনা ঘোচাবার ।
আজকে গাড়ি চড়ার আগে একেবারে থোকে
পঁচিশ টাকা দিতেই হবে ওকে ।
অবাক কান্ড এ কী ।
এমন কথা মানুষ শুনেছে কি ।
জাতে হয়তো মেথর হবে , কিংবা নেহাত ওঁচা ,
যাত্রীঘরের করে ঝাড়ামোছা ,
পঁচিশ টাকা দিতেই হবে তাকে!
এমন হলে দেউলে হতে কদিন বাকি থাকে ।
" আচ্ছা , আচ্ছা , হবে , হবে । আমি দেখছি মোট
এক শো টাকার আছে একটা নোট ,
সেটা আবার ভাঙানো নেই! "

বিনু বললে , " এই
ইস্টিশনেই ভাঙিয়ে নিলেই হবে । "
" আচ্ছা , দেব তবে "
এই বলে সেই মেয়েটাকে আড়ালেতে নিয়ে গেলেম ডেকে ,—
আচ্ছা করেই দিলেম তারে হেঁকে —
" কেমন তোমার নোকরি থাকে দেখব আমি!
প্যাসেঞ্জারকে ঠকিয়ে বেড়াও! ঘোচাব নষ্টামি! "
কেঁদে যখন পড়ল পায়ে ধরে
দু-টাকা তার হাতে দিয়ে দিলেম বিদায় করে ।

জীবন-দেউল আঁধার করে নিবল হঠাৎ আলো ।
ফিরে এলেম দু-মাস যেই ফুরাল ।
বিলাসপুরে এবার যখন এলেম নামি ,
একলা আমি ।
শেষ নিমেষে নিয়ে আমার পায়ের ধূলি
বিনু আমায় বলেছিল , " এ জীবনের যা-কিছু আর ভুলি
শেষ দুটি মাস অনন্তকাল মাথায় রবে মম
বৈকুণ্ঠেতে নারায়ণীর সিঁথের ' পরে নিত্য সিঁদুর - সম ।
এই দুটি মাস সুধায় দিলে ভরে
বিদায় নিলেম সেই কথাটি স্মরণ করে । "

ওগো অন্তর্যামী ,
বিনুরে আজ জানাতে চাই আমি
সেই দু-মাসের অর্ঘ্যে আমার বিষম বাকি ,
পঁচিশ টাকার ফাঁকি ।
দিই যদি আজ রুক্‌মিনীরে লক্ষ টাকা
তবুও তো ভরবে না সেই ফাঁকা ।
বিনু যে সেই দু-মাসটিরে নিয়ে গেছে আপন সাথে ,
জানল না তো ফাঁকিসুদ্ধ দিলেম তারি হাতে ।

বিলাসপুরে নেমে আমি শুধাই সবার কাছে
" রুক্‌মিনী সে কোথায় আছে ?"
প্রশ্ন শুনে অবাক মানে —
রুক্‌মিনী কে তাই বা ক-জন জানে ।
অনেক ভেবে " ঝামরু কুলির বউ " বললেম যেই ,
বললে সবে , " এখন তারা এখানে কেউ নেই । "
শুধাই আমি , " কোথায় পাব তাকে । "
ইস্টেশনের বড়োবাবু রেগে বলেন , " সে খবর কে রাখে । "
টিকিটবাবু বললে হেসে , " তারা মাসেক আগে
গেছে চলে দার্জিলিঙে কিংবা খসরুবাগে ,
কিংবা আরাকানে । "
শুধাই যত , " ঠিকানা তার কেউ কি জানে । " —
তারা কেবল বিরক্ত হয় , তার ঠিকানায় কার কাছে কোন্‌ কাজ ।
কেমন করে বোঝাই আমি — ওগো আমার আজ
সবার চেয়ে তুচ্ছ তারে সবার চেয়ে পরম প্রয়োজন ;
ফাঁকির বোঝা নামাতে মোর আছে সেই একজন ।
" এই দুটি মাস সুধায় দিলে ভরে "
বিনুর মুখে শেষ কথা সেই বইব কেমন করে ।
রয়ে গেলেম দায়ী
মিথ্যা আমার হল চিরস্থায়ী ।

Sunday, August 8, 2010

দুই বিঘা জমি

শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে ।
বাবু বলিলেন , ' বুঝেছ উপেন , এ জমি লইব কিনে । '
কহিলাম আমি , ' তুমি ভূস্বামী , ভূমির অন্ত নাই ।
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো - জোর মরিবার মতো ঠাঁই । '
শুনি রাজা কহে , ' বাপু , জানো তো হে , করেছি বাগানখানা
পেলে দুই বিঘে প্রস্থ ও দিঘে সমান হইবে টানা —
ওটা দিতে হবে । ' কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে , ' করুণ রক্ষে গরিবের ভিটেখানি ।
সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া ,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া ! '
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে ,
কহিলেন শেষে ক্রূর হাসি হেসে , ' আচ্ছা , সে দেখা যাবে । '

পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে —
করিল ডিক্রি , সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে ।
এ জগতে , হায় , সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি —
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি ।
মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে ,
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে ।
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য
কত হেরিলাম মনোহর ধাম , কত মনোরম দৃশ্য !
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে সেই দুই বিঘা জমি ।
হাটে মাঠে বাটে এই মতো কাটে বছর পনেরো - ষোলো —
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়ই বাসনা হল ।

নমোনমো নম সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি !
গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর , জীবন জুড়ালে তুমি ।
অবারিত মাঠ , গগনললাট চুমে তব পদধূলি ,
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি ।
পল্লবঘন আম্রকানন রাখালের খেলাগেহ ,
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল — নিশীথশীতল স্নেহ ।
বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে —
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান , চোখে আসে জল ভরে ।
দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশিনু নিজগ্রামে —
কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি রথতলা করি বামে ,
রাখি হাটখোলা , নন্দীর গোলা , মন্দির করি পাছে
তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে ।

ধিক্‌ ধিক্‌ ওরে , শতধিক্‌ তোরে , নিলাজ কুলটা ভূমি !
যখনি যাহার তখনি তাহার , এই কি জননী তুমি !
সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্রমাতা
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফল ফুল শাক পাতা !
আজ কোন্‌ রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাসবেশ —
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা , পুষ্পে খচিত কেশ !
আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা সুখহীন —
তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী , হাসিয়া কাটাস দিন !
ধনীর আদরে গরব না ধরে! এতই হয়েছ ভিন্ন
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সেদিনের কোনো চিহ্ন !
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি , ক্ষুধাহরা সুধারাশি !
যত হাসো আজ যত করো সাজ ছিলে দেবী , হলে দাসী ।

বিদীর্ণ হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি —
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে , সেই আমগাছ একি !
বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা ,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালক - কালের কথা ।
সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম ,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম ।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর , পাঠশালা - পলায়ন —
ভাবিলাম হায় আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন !
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে ,
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে ।
ভাবিলাম মনে বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা ,
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা ।

হেনকালে হায় যমদূত - প্রায় কোথা হতে এল মালী ,
ঝুঁটি - বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি ।
কহিলাম তবে , ' আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব —
দুটি ফল তার করি অধিকার , এত তারি কলরব ! '
চিনিল না মোরে , নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ —
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ - সাথে ধরিতেছিলেন মাছ ।
শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন , ' মারিয়া করিব খুন ! '
বাবু যত বলে পারিষদ - দলে বলে তার শতগুণ ।
আমি কহিলাম , ' শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয় ! '
বাবু কহে হেসে , ' বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয় । '
আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি , এই ছিল মোর ঘটে —
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ , আমি আজ চোর বটে !

Tuesday, August 3, 2010

বনলতা সেন

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি ; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি ; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের 'পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ' এতোদিন কোথায় ছিলেন?'
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

আবার আসিব ফিরে

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শাঁখচিল শালিকের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।
হয়তো বা হাঁস কোনো- কিশোরীর- ঘুঙুর রহিবে লাল পায়
সারাদিন কেটে যাবে কল্মীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলঙ্গীর ঢেউএ ভেজা বাংলারই সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমূলের ডালে।
হয়তো খৈয়ের ধান সরাতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে।
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙ্গা বায়; রাঙ্গা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক; আমারে পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।

Sunday, August 1, 2010

দুরন্ত আশা



মর্মে যবে মত্ত আশা
সর্পসম ফোঁসে,
অদৃষ্টের বন্ধনেতে
দাপিয়া বৃথা রোষে,
তখনো ভালোমানুষ সেজে
বাঁধানো হুঁকা যতনে মেজে
মলিন তাস সজোরে ভেঁজে
খেলিতে হবে কষে!
অন্নপায়ী বঙ্গবাসী
স্তন্যপায়ী জীব
জন-দশেকে জটলা করি
তক্তপোশে ব'সে।

ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো,
পোষ-মানা এ প্রাণ
বোতাম-আঁটা জামার নীচে
শান্তিতে শয়ান।
দেখা হলেই মিষ্ট অতি
মুখের ভাব শিষ্ট অতি,
অলস দেহ ক্লিষ্টগতি—
গৃহের প্রতি টান।
তৈল-ঢালা স্নিগ্ধ তনু
নিদ্রারসে ভরা,
মাথায় ছোটো বহরে বড়ো
বাঙালি সন্তান।

ইহার চেয়ে হতেম যদি
আরব বেদুয়িন!
চরণতলে বিশাল মরু
দিগন্তে বিলীন।
ছুটেছে ঘোড়া, উড়েছে বালি,
জীবনস্রোত আকাশে ঢালি
হৃদয়তলে বহ্নি জ্বালি
চলেছি নিশিদিন।
বর্শা হাতে, ভর্‌সা প্রাণে,
সদাই নিরুদ্দেশ,
মরুর ঝড় যেমন বহে
সকল বাধাহীন।

বিপদ-মাঝে ঝাঁপায়ে প'ড়ে
শোণিত উঠে ফুটে,
সকল দেহে সকল মনে
জীবন জেগে উঠে—

অন্ধকারে সূর্যালোতে
সন্তরিয়া মৃত্যুস্রোতে
নৃত্যময় চিত্ত হতে
মত্ত হাসি টুটে।
বিশ্বমাঝে মহান যাহা
সঙ্গী পরানের,
ঝঞ্ঝামাঝে ধায় সে প্রাণ
সিন্ধুমাঝে লুটে।
নিমেষতরে ইচ্ছা করে
বিকট উল্লাসে
সকল টুটে যাইতে ছুটে
জীবন-উচ্ছ্বাসে—

শূন্য ব্যোম অপরিমাণ
মদ্যসম করিতে পান
মুক্ত করি রুদ্ধ প্রাণ
ঊর্ধ্ব নীলাকাশে।
থাকিতে নারি ক্ষুদ্র কোণে
আম্রবনছায়ে
সুপ্ত হয়ে লুপ্ত হয়ে
গুপ্ত গৃহবাসে।

বেহালাখানা বাঁকায়ে ধরি
বাজাও ওকি সুর—
তবলা-বাঁয়া কোলেতে টেনে
বাদ্যে ভরপুর!

কাগজ নেড়ে উচ্চ স্বরে
পোলিটিকাল তর্ক করে,
জানলা দিয়ে পশিছে ঘরে
বাতাস ঝুরুঝুর।

পানের বাটা, ফুলের মালা,
তবলা-বাঁয়া দুটো,
দম্ভ-ভরা কাগজগুলো
করিয়া দাও দূর!

কিসের এত অহংকার!
দম্ভ নাহি সাজে—
বরং থাকো মৌন হয়ে
সসংকোচ লাজে।
অত্যাচারে মত্ত-পারা
কভু কি হও আত্মহারা?
তপ্ত হয়ে রক্তধারা
ফুটে কি দেহমাঝে?
অহর্নিশি হেলার হাসি
তীব্র অপমান
মর্মতল বিদ্ধ করি
বজ্রসম বাজে?

দাস্যসুখে হাস্যমুখ,
বিনীত জোড়-কর,
প্রভুর পদে সোহাগ-মদে
দোদুল কলেবর!
পাদুকাতলে পড়িয়া লুটি
ঘৃণায় মাখা অন্ন খুঁটি
ব্যগ্র হয়ে ভরিয়া মুঠি
যেতেছ ফিরি ঘর।
ঘরেতে ব'সে গর্ব কর
পূর্বপুরুষের,
আর্যতেজদর্পভরে
পৃথ্বী থরহর।

হেলায়ে মাথা, দাঁতের আগে
মিষ্ট হাসি টানি
বলিতে আমি পারিব না তো
ভদ্রতার বাণী।
উচ্ছ্বসিত রক্ত আসি
বক্ষতল ফেলিছে গ্রাসি,
প্রকাশহীন চিন্তারাশি
করিছে হানাহানি।
কোথাও যদি ছুটিতে পাই
বাঁচিয়া যাই তবে—
ভব্যতার গণ্ডিমাঝে
শান্তি নাহি মানি।