Monday, July 29, 2013

ভ্রমর কইও গিয়া

ভ্রমর কইও গিয়া, শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে
অঙ্গ যায় জ্বলিয়ারে, ভ্রমর কইও গিয়া।

ভ্রমর রে,
কইও কইও কইওরে ভ্রমর, কৃষ্ণরে বুঝাইয়া
মুই রাধা মইরা যাইমু, কৃষ্ণহারা হইয়া রে
ভ্রমর কইও গিয়া।

ভ্রমর রে,
আগে যদি জানতাম রে ভ্রমর যাইবা রে ছাড়িয়া
মাথার কেশ দুই ভাগ করে রাখিতাম বান্ধিয়া রে
ভ্রমর কইও গিয়া।

ভ্রমর রে,
ভাইবে রাধার মন বলে শোন রে কালিয়া
নিভা ছিল মনের আগুন, কে দিলা জ্বালাইয়া
ভ্রমর কইও গিয়া।

Sunday, July 28, 2013

বছর কুড়ি পরে

আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি!
আবার বছর কুড়ি পরে-
হয়তো ধানের ছড়ার পাশে
কার্তিকের মাসে-
তখন সন্ধ্যার কাক ঘরে ফেরে-তখন হলুদ নদী
নরম নরম হয় শর কাশ হোগলায়-মাঠের ভিতরে!

অথবা নাইকো ধান ক্ষেতে আর,
ব্যস্ততা নাইকো আর,
হাঁসের নীড়ের থেকে খড়
পাখির নীড়ের থেকে খড়
ছড়াতেছে; মনিয়ার ঘরে রাত, শীত আর শিশিরের জল!

জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুঁড়ি কুঁড়ি, বছরের পার-
তখন হঠাৎ যদি মেঠো পথে পাই আমি তোমারে আবার!

হয়তো এসেছে চাঁদ মাঝরাতে একরাশ পাতার পিছনে
সরু-সরু কালো কালো ডালপালা মুখে নিয়ে তার,
শিরীষের অথবা জামের,
ঝাউয়ের-আমের;
কুড়ি বছরের পরে তখন তোমারে নাই মনে!

জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার-
তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার!

তখন হয়তো মাঠে হামাগুড়ি দিয়ে পেঁচা নামে
বাবলার গলির অন্ধকারে
অশথের জানালার ফাঁকে
কোথায় লুকায় আপনাকে!
চোখের পাতার মতো নেমে চুপি চিলের ডানা থামে-

সোনালি সোনালি চিল-শিশির শিকার করে নিয়ে গেছে তারে-
কুড়ি বছরের পরে সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে!

সৎপাত্র

শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে-
তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে?
গঙ্গারামকে পাত্র পেলে?
জানতে চাও সে কেমন ছেলে?

মন্দ নয় সে পাত্র ভাল-
রঙ যদিও বেজায় কালো;
তার উপরে মুখের গঠন
অনেকটা ঠিক পেঁচার মতন।

বিদ্যে বুদ্ধি? বলছি মশাই-
ধন্যি ছেলের অধ্যাবসায়!
উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে
ঘায়েল হয়ে থামল শেষে।
বিষয় আশায়? গরীব বেজায়-
কষ্টে- সৃষ্টে দিন কেটে যায়।

মানুষ তো নয় ভাই গুলো তার-
একটি পাগল একটি গোঁয়ার;
আরেকটি সে তৈরি ছেলে,
জাল করে নোট গেছেন জেলে।

কনিষ্ঠটি তবলা বাজায়
যাত্রা দলে পাঁচ টাকা পায়।
গঙ্গারাম তো কেবল ভোগে
পিলের ‍‍‍‌‍জ়র আর পাণ্ড রোগে।

কিন্তু তারা উচ্চ ঘর,
কংস রাজার বংশধর!
শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের
কি যেন হয় গঙ্গারামের।-
যাহোক এবার পাত্র পেলে,
এমন কি আর মন্দ ছেলে?

গরম দুপুরে

এই আধপোড়া শহরটা
দগদগে ঘা নিয়ে
ধুকপুক করে বাঁচে
গরম দুপুরে।

এই চেনামুখ শহরের
অলিগলি সাপগুলি
দমচেপে পড়ে থাকে
গরম দুপুরে।

এই ঘামে ভেজা শহরের
নাগরিক ফিরিওয়ালা
দরজায় টোকা মারে
গরম দুপুরে।

এই ঝিমধরা শহরের
আলোছায়া গৃহকোণে
গৃহিনী নিদ্রা দেন
গরম দুপুরে।

এই আধপেটা শহরের
কুকুর কাকের সাথে
জঞ্জালে মুখ রাখে
গরম দুপুরে।

এই আধপোড়া শহরের
একা নদি বয়ে চলে
মড়া পোড়া ছাই নিয়ে
গরম দুপুরে।

আমার কিছু কথা ছিলো

আমার কিছু কথা ছিলো
তোমায় বলার কেবল তোমায়
যেই না আমি ঠোঁট নেড়েছি
সেই কথাটা তলিয়ে গেল
এ সময়ে শব্দ তলায়।

কিছুই তো আর যায়না শোনা
কার কথা কে বুঝবে বলো
বুঝতে হলে কথার মানে
চেনা পথের বাইরে চলো
মন, তোমার বুকের আগল খোল।

এখন নাকি শব্দগুলো
এক মূহুর্তে সাগর পেড়োয়
এখন নাকি যন্ত্রগুলো
এপার থেকে আমার কথা
তোমার পারে পৌছিয়ে দেয়।

তবু কিছুই যায়না বলা
শব্দ খেলায় কেবল ফাঁকি
কথার পিঠে কথা সাজাই
আমরা এখন একলা থাকি।

তোমার আমার ক্লান্ত দেহ
শব্দে কথায় ভারাক্রান্ত
কত রকম কথা বলা
বলতে বলতে চলতে চলতে
পৌছে গেছি এ কোন প্রান্ত।

হয়তো তুমি পাশেই আছো
তবু তোমায় ছুঁতে কি পাই
তোমার বুকে ব্যথা ছিলো
কেমন করে কথা দিয়ে
সেই ব্যথাতে আঙুল বুলাই।

বলতে হলে নতুন কথা
চেনা পথের বাইরে চলো
অন্ধকারে যায়না দেখা
তবু তুমি হাতড়ে চলো
তোমার বুকের আগল খোলো।

মন রে আমার কিছু কথা ছিলো

Wednesday, July 3, 2013

অনন্য

আমি খুঁজছি, আমি খুঁজছি তোমার ঠিকানা,
অলি গলি ঘুরে ক্লান্ত তবু তোমায় পাচ্ছিনা।
তুমি বলেছিলে সেই দিন, সেই দূপুর বেলাতে,
চলে এসো ফাঁক পেলে, এসো আমার বাড়িতে।
তাই আজকের এই একলা দূপুরে কাজ টাজ সব ফেলে,
আমি এসেছি তোমার শহর প্রান্তে গল্প করবো বলে।
হাতে ধরা আছে চিরকুট তাতে তোমার ঠিকানা,
এ বি সি ব্লকের গোলক ধাঁধায় তোমায় পাচ্ছি না।
সারি সারি সব বাড়ি যেন সারবাধা সব সৈন্য,
সব এক রঙ সব এক ধাঁচ তুমি কোথায় থাকো অনন্য?

তুমি বলেছিলে সেই দিন, সেই ব্যাস্ত সকালে,
এসো নিশ্চয় এসো একবার আমাদের মিছিলে।
তাই ইচ্ছে হল জানতে কিভাবে দাবির কথা তুলে,
কেমন সবাই হাত ধরে ধরে গান গেয়ে পথ চলে।
এসে দেখি আমি, ধর্মতলার চার কোনে চার দল,
সব নানা সুরে বলে একই কথা, আমার সঙ্গে চল।
এতো শব্দ এতো চিৎকার তবু কি নিদারুন দৈন্য,
একই শ্লোগানে নানা গন্ধ তুমি কোথায় ছিলে অনন্য?

নন্দলাল

নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ -
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, 'আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?'
নন্দ বলিল, 'বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?'
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।'

নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা!
সকলে বলিল, 'যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা'
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক'
তখন সকলে বলিল- 'হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।'
নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে গদ্যে, পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ;
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল,
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।'

নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, 'আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি' বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।'
তখন সকলে বলিল – 'বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!'

নন্দ বাড়ির হ'ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে 'কলিসন' হয়;
হাঁটতে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল
সকলে বলিল- 'ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।'

যশোর রোড

শত শত চোখ আকাশটা দেখে
শত শত শত মানুষের দল
যশোর রোডের দু-ধারে বসত
বাঁশের ছাউনি, কাদামাটি জল।

কাদামাটি মাখা মানুষের দল
গাদাগাদি হয়ে আকাশটা দেখে
আকাশে বসত মরা ঈশ্বর
নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে?

শত শত মুখ হায় একাত্তুর
যশোর রোড যে কত কথা বলে
এত মরা মুখ আধ মরা পায়ে
পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে ।

সময় চলেছে রাজপথ ধরে
যশোর রোডেতে মানুষ মিছিল
সেপ্টেম্বর হায় একাত্তুর
গরুগাড়ি কাদা রাস্তা পিছিল।

লক্ষ মানুষ ভাত চেয়ে মরে
লক্ষ মানুষ শোকে ভেসে যায়
গৃহহীন ভাসে শত শত লোক
লক্ষ জননী পাগলের প্রায়।

রিফিউজি ঘরে খিদে পাওয়া শিশু
পেটগুলো সব ফুলে ফেঁপে ওঠে
এইটুকু শিশু, এতবড় চোখ
দিশেহারা মা কার কাছে ছোটে।

সেপ্টেম্বর ভয়ে কাতর
এতো এতো শুধু মানুষের মুখ
যুদ্ধ, মৃত্যু তবুও স্বপ্ন
ফসলের মাঠে ফেলে আসা সুখ।

কার কাছে বলি ভাত রুটি কথা
কাকে বলি কর কর ত্রাণ
কাকে বলি ওগো মৃত্যু থামাও
মরে যাওয়া বুকে এনে দাও প্রাণ।

কাঁদো কাঁদো তুমি মানুষের দল
তোমার শরীর ক্ষত দিয়ে ঢাকা
জননীর কোলে আধপেটা শিশু
এ কেমন বাঁচা, বেঁচে মরে থাকা।

ছোট ছোট তুমি মানুষের দল
তোমার ঘরেও মৃত্যুর ছায়া
গুলিতে ছিন্ন দেহ-মন-মাটি
ঘর ছেড়েছো তো মাটি মিছে মায়া।

সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর
ঘর ভেঙ্গে গেছে যুদ্ধের ঝড়ে
যশোর রোডের দু'ধারে মানুষ
এত এত লোক শুধু কেন মরে।

ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে
যুদ্ধে ছিন্ন ঘর-বাড়ী-দেশ
মাথার ভিতর বোমারু বিমান
এই কালো রাত কবে হবে শেষ।